সিনিয়র সাংবাদিক এম এ আজিজের মতে, এনসিপি আসলে ‘তাফালিং’ পার্টি—বাস্তবে কোনো বড় রাজনৈতিক শক্তি নয়। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সহায়তায় দলটি কৃত্রিমভাবে বড় বানানো হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অঙ্গনে যেসব নতুন দলের নাম উঠে আসছে, তার মধ্যে এনসিপি (ন্যাশনাল কনভেনশন পার্টি) বর্তমানে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। তবে সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট এম এ আজিজের মতে, এই দলটিকে যত বড় করে দেখা হচ্ছে, বাস্তবে ততটা প্রভাবশালী নয়। তার ভাষায়, এনসিপি আসলে একটি ‘তাফালিং’ পার্টি—শক্তিশালী কোনো রাজনৈতিক শক্তি নয়।
সম্প্রতি এক বেসরকারি টেলিভিশনের টক শোতে অংশ নিয়ে এম এ আজিজ সরাসরি অভিযোগ তোলেন যে, এনসিপি তাদের যাত্রা শুরু করেছিল কোনো প্রকার আনুষ্ঠানিক নিবন্ধন ছাড়াই। তবুও দলটি রাজনৈতিক মঞ্চে জায়গা করে নিতে পেরেছে, যা সম্ভব হয়েছে কিছু প্রভাবশালী মহলের পরোক্ষ সহায়তায়। তার দাবি, এনসিপিকে ‘বড় দল’ হিসেবে দাঁড় করানোর অন্যতম কারিগর ছিলেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
এম এ আজিজ বলেন, “ড. ইউনূস কৃত্রিমভাবে এনসিপিকে বড় করে তুলেছেন। শুরুর দিকে দলের কোনো নিবন্ধনই ছিল না, কিন্তু তবুও বড় রাজনৈতিক দলের সঙ্গে একই টেবিলে বসিয়ে আলোচনায় আনা হয়েছে। এখন যেসব প্রস্তাব টেবিলে আসছে, সেখানে চার ভাগের তিন ভাগই ওয়ান-ইলেভেনের সময়কার স্বৈরাচারী শাসনের অংশ ছিল। যখন এসব নাম সামনে আসবে, তখনই নতুন করে অস্থিরতা তৈরি হবে।”
চট্টগ্রামে এনসিপি নেতার চাঁদাবাজির কথোপকথন ফাঁস হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “চাঁদাবাজি এখন যেন জাতীয় সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে। কেউ একে ‘হাদিয়া’ বলে, কেউ ‘ডোনেশন’ বা ‘অনুদান’ বলে—কিন্তু কাজের ধরন একই। এই প্রবণতা থেকে কোনো রাজনৈতিক দলই পিছিয়ে নেই। এনসিপি দলীয়ভাবে শোকজ নোটিশ দিলেও, এটি মূলত দায় এড়ানোর কৌশল।”
তিনি আরও যোগ করেন, সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনের পর জনগণের প্রত্যাশা ছিল একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। কিন্তু এনসিপি এতটাই বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছে যে, আগামী ১০ বছরেও কোনো বড় ধরনের ছাত্র আন্দোলন সফলভাবে সংগঠিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তার মতে, গুলশানে এনসিপি সংশ্লিষ্টদের চাঁদাবাজিতে ধরা পড়া, রিমান্ডে যাওয়া—সবই প্রমাণ করে, যাদের ওপর মানুষ ভরসা করেছিল, তারাও দুর্নীতির বাইরে নয়।
পিআর (Proportional Representation) সিস্টেম প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে এম এ আজিজ উল্লেখ করেন, বর্তমানে চারটি রাজনৈতিক দল এই ব্যবস্থার দাবিতে সরব হয়েছে। জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ঐক্যজোট তুলনামূলক বড় দল হিসেবে এর পক্ষে থাকলেও, এনসিপি কেবল নামেই বড়। তিনি বেলজিয়ামের উদাহরণ দিয়ে বলেন, “বেলজিয়ামে পিআর সিস্টেম চালু হওয়ার পর দেশটি ভাষা ও অঞ্চলভিত্তিকভাবে বিভক্ত হয়ে গেছে। ভারতে এই সিস্টেম নেই, অথচ তারা একটি পরিণত গণতন্ত্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশে পিআর সিস্টেম বাস্তবায়ন হলে আসন কেনাবেচার প্রবণতা আরও বাড়বে।”
এম এ আজিজের এই মন্তব্য রাজনৈতিক মহলে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। তার মতে, এনসিপির জনপ্রিয়তা অনেকটাই কৃত্রিম এবং প্রভাবশালী গোষ্ঠীর মদদ ছাড়া তাদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে।