বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানা এনসিপি নেতাদের ভাষা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি দাবি করেন, তাদের রাজনৈতিক ভাষা স্ল্যাম এলাকায় ব্যবহৃত শব্দের মতো, তাই অনেকে তাদের ফকিন্নি বা বস্তি বলে আখ্যা দেন।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আবারো উত্তেজনা ছড়িয়েছে বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক এমপি রুমিন ফারহানার মন্তব্যকে কেন্দ্র করে। তিনি সম্প্রতি এনসিপি (ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি) নেতাদের রাজনৈতিক বক্তব্য ও আচরণকে সরাসরি আক্রমণ করে বলেন, তাদের ব্যবহার করা ভাষা বস্তি বা স্ল্যাম এলাকায় প্রচলিত অশ্রাব্য শব্দের মতো।
রুমিন ফারহানার মন্তব্য ঘিরে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক মহল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে তিনি যখন প্রকাশ্যে এনসিপির দক্ষিণ অঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহকে ‘ফকিন্নির বাচ্চা’ বলে উল্লেখ করেন, তখন বিষয়টি তীব্র আলোচনার জন্ম দেয়।
একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে অংশ নিয়ে রুমিন ফারহানা বলেন, “ফকিন্নির বাচ্চা ব্যাপারটা আসলে একটি মানসিকতার প্রতিফলন। এর মানে এই নয় যে, আপনি আর্থিকভাবে গরিব। বরং এর মানে হলো, আপনার চিন্তাভাবনার ভেতর এখনো নিম্নমানের কিছু জিনিস কাজ করছে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন, এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব হুমায়রা নূর কী ধরনের ভাষা ব্যবহার করেছেন। ওসব ভাষা মূলত স্ল্যাম এলাকায় ব্যবহার হয়। খুব নিয়মিতই হয়। এজন্য কেউ তাদের ফকিন্নি বলে, কেউ বস্তি বলে, কেউবা কাচড়া বলে।
রুমিন ফারহানা অভিযোগ করেন যে, এনসিপি নেতারা তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করার সময় যে ধরনের শব্দ প্রয়োগ করেন, তা ভদ্র সমাজের ভাষা নয় বরং নিম্নস্তরের আক্রমণাত্মক স্ল্যাং। তার ভাষায়, “ওরা যেই ভাষায় রাজনীতি করে, যেই ভাষায় স্লোগান দেয়, প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করে বা প্রতিদ্বন্দ্বীকে ফ্রেম করে—সেটা আসলে বস্তির ভাষার সঙ্গে একেবারে মিলে যায়।”
এর আগে হাসনাত আবদুল্লাহ তাকে ‘বিএনপির আওয়ামী লীগবিষয়ক সম্পাদক’ হিসেবে ব্যঙ্গ করে উল্লেখ করেছিলেন। এর জবাবে রুমিন ফারহানা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাল্টা আক্রমণ করেন এবং হাসনাতের আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ তুলে ধরেন। তিনি হাসনাতের বিভিন্ন ছবি ও প্রমাণ শেয়ার করে দাবি করেন, এনসিপি নেতারা নিজেদের নিরপেক্ষ বলে দাবি করলেও বাস্তবে তারা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গেই সম্পৃক্ত।
এই ঘটনার পর রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, দেশের রাজনীতিতে নেতাদের মধ্যে পারস্পরিক কটাক্ষ ও অপমানজনক ভাষা ব্যবহার ক্রমেই বেড়ে চলেছে, যা সাধারণ জনগণের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। আবার অনেকে বলছেন, এই ধরনের প্রকাশ্য সংঘাত মূলত দলগুলোর ভেতরকার বিভাজন ও হতাশার প্রতিফলন।
প্রসঙ্গত, রুমিন ফারহানা একজন প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী। তিনি একাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন-৫০ থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার বাবা অলি আহাদ ছিলেন ভাষা সৈনিক, স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত রাজনীতিবিদ এবং আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাংগঠনিক সম্পাদক। বাবার হাত ধরেই তিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। তবে বিএনপির হয়ে সক্রিয় হয়ে ওঠার পর থেকেই তাকে দলটির অন্যতম সোচ্চার কণ্ঠস্বর হিসেবে গণ্য করা হয়।
অন্যদিকে, এনসিপি বাংলাদেশের একটি নতুন রাজনৈতিক শক্তি, যারা বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনায় এসেছে। তবে বড় রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে তাদের সংঘাত ও উত্তেজনা প্রায়ই খবরের শিরোনাম হয়।
বর্তমান ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে—বাংলাদেশের রাজনীতিতে সভ্য ও গঠনমূলক ভাষার ব্যবহার কতটা সম্ভব হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজনৈতিক সংস্কৃতি যদি আরও আক্রমণাত্মক হতে থাকে, তবে তা শুধু দলীয় বিভাজনই নয়, বরং সাধারণ মানুষের মধ্যে রাজনীতিবিদদের প্রতি আস্থা কমিয়ে দেবে।
ফলে রুমিন ফারহানা ও এনসিপি নেতাদের এই সংঘাত শুধু একটি ব্যক্তিগত লড়াই নয়, বরং বৃহত্তর রাজনৈতিক সংস্কৃতির সংকটের দিকেই ইঙ্গিত করছে।