উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তের পর হাসপাতালে ভিড় করেছেন স্বজনরা। মেয়ে আফিয়ার খোঁজ না পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন এক মা। এখনো নিখোঁজ অনেক শিশু শিক্ষার্থী।
রাজধানীর উত্তরা এলাকায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় হাসপাতালগুলোতে চলছে চরম উদ্বেগ ও আতঙ্ক। মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাদে বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার পর বহু শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন। আহত ও নিহতদের উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হচ্ছে। প্রিয়জনদের খোঁজে সেখানে ছুটে এসেছেন শত শত অভিভাবক।
২১ জুলাই সোমবার বিকেলে হাসপাতাল চত্বরে দেখা গেছে হৃদয়বিদারক দৃশ্য। কান্না, দুশ্চিন্তা আর আতঙ্কে সেখানে উপস্থিত প্রতিটি মানুষই যেন এক শোকের ভার বয়ে বেড়াচ্ছেন।
মাইলস্টোন স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী আফিয়ার খোঁজে হাসপাতালে আসেন তার মা। কিন্তু হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কোনো তথ্য না পেয়ে ভেঙে পড়েন তিনি। চোখে পানি, গলায় আকুতি—“আমার মেয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না। একটু বলেন, আমার মেয়ে কোথায় আছে?”—এই করুণ আহ্বান হৃদয় ছুঁয়ে যায় উপস্থিত সবার।
পরে মেডিকেলের কয়েকজন শিক্ষার্থী আফিয়ার ছবি দেখে নিশ্চিত করেন, তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে স্থানান্তর করা হয়েছে।
বিমান বিধ্বস্তের খবর ছড়িয়ে পড়তেই হাসপাতালে ভিড় জমাতে থাকেন অভিভাবক ও আত্মীয়স্বজনরা। অনেকেই সন্তান বা প্রিয়জনের সন্ধানে পাগলপ্রায়। কেউ পেয়েছেন খোঁজ, কেউ এখনো খবরের আশায় দাঁড়িয়ে আছেন দরজার সামনে।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনের পরিবেশ একেবারেই শোকাবহ। শিশুর কান্না, অভিভাবকদের আহাজারি, এবং হাহাকারে হাসপাতালের চারপাশ যেন মৃত্যু ও বাঁচার লড়াইয়ের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে।
এর আগে দুপুর ১টা ৬ মিনিটে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি F-7 BGI মডেলের প্রশিক্ষণ বিমান উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাদে আছড়ে পড়ে। এতে স্কুল ভবনের একটি অংশে আগুন ধরে যায় এবং সেখানে অবস্থানরত বহু শিক্ষার্থী দগ্ধ হন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হঠাৎ বিকট শব্দ শুনে চারপাশ কেঁপে ওঠে। সঙ্গে সঙ্গেই দেখা যায় ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন স্কুল ভবন এবং আতঙ্কিত শিশুদের কান্না।
বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, সেনাবাহিনী, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। দ্রুত উদ্ধার অভিযানে নামা হয়। দগ্ধ ও আহত শিক্ষার্থীদের দ্রুত বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়।
জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়েছে বেশ কয়েকজন আশঙ্কাজনক শিশুকে, যেখানে তাদের জরুরি চিকিৎসা চলছে।
হাসপাতালে থাকা অভিভাবকদের একজন বলেন, “আমার ছেলেকে খুঁজে পাচ্ছি না। নামের তালিকায় নেই, কিন্তু সে স্কুলে ছিল—আমি জানি।” এমন করুণ আকুতি শোনা যাচ্ছে বহুজনের মুখে।
অনেক শিশুই এখনো নিখোঁজ, অথবা কোন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে তা নিশ্চিত নয় বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
ঘটনার পরপরই তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। বিমান বাহিনীর পক্ষ থেকেও কারণ অনুসন্ধানে অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু হয়েছে।
জনমনে প্রশ্ন উঠেছে—ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এমন প্রশিক্ষণ কিভাবে চলছিল? কেনো ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার ওপর দিয়ে উড়ছিল যুদ্ধবিমান?