close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

একজন সংবাদকর্মী ও আন্দোলনকারীর চোখে: জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান..

Azizar Rahman avatar   
Azizar Rahman
১৬ জুলাই—দিনটি ছিল যেন একটি আগুন জ্বালানো সকাল। একজন সংবাদকর্মী হিসেবে আমি ছিলাম ঘটনার পেছনের খোঁজে, আর একজন আন্দোলনকারী হিসেবে ছিলাম জনগণের সামনে। সেই দিনটিতে খবর সংগ্রহ করিনি, নিজের হৃদয়ের তাগিদে মা..

সংবাদকর্মীর চোখে আমি দেখেছি—কীভাবে ক্ষমতার ছায়ায় সংবাদ চাপা পড়ে যায়। আন্দোলনকারীর চোখে দেখেছি—কীভাবে একটি ক্ষুদ্র প্রতিবাদ এক বিশাল জনস্রোতে পরিণত হয়। শত বাধা সত্ত্বেও মানুষ এসেছে। যুবক, বৃদ্ধ, নারী—সবাই গলা মিলিয়েছে “অবিচারের বিরুদ্ধে”।

সেদিন কেবল সংবাদ লিখিনি—ইতিহাসের সাক্ষী হয়েছি।

আমরা যারা সেই আন্দোলনের অংশ ছিলাম, তারা জানি কী ত্যাগ, সাহস আর সংকল্প লাগে একটি গণঅভ্যুত্থানে অংশ নিতে। আমি বিশ্বাস করি, এই অভ্যুত্থান ছিল শুধু সরকারের বিরুদ্ধে নয়, ছিল আমাদের নিজেদের ভেতরের দুর্বলতা, ভয় আর নিঃসঙ্গতার বিরুদ্ধেও।

এই অভিজ্ঞতা আমাকে সাংবাদিকতাকে নতুনভাবে বুঝতে শিখিয়েছে—সত্য শুধু লিখে গেলেই হয় না, কখনও কখনও তার জন্য লড়তে হয়।

সত্য কখনো লুকিয়ে রাখা উচিত নয়—সমালোচনা নয়, আত্মসমালোচনা করুন

১৬ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ঐতিহাসিক জুলাই আন্দোলনের সময় খানসামায় যারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন, তাদের অবদান অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই।

প্রথম দিনের মাইক ভাড়া পর্যন্ত নিজের পকেট থেকে বহন করে আন্দোলনের সূচনা হয়। ১৭ জুলাই সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ আন্দোলনকে বেগবান করে তোলে। স্থানীয় জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে টাকা, খাবার, পানি দিয়ে আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়ান, যা আমাদের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে।


১৮, ১৯, ২০ জুলাই আওয়ামী লীগ নেতাদের চাপে পুলিশ আন্দোলন দমনে প্রয়াস চালালেও পুলিশের দ্বিধাদ্বন্দ্বে তা কার্যকর হয়নি। ২১ জুলাই উপজেলা প্রশাসনের জরুরি  সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম পুনরায় পুলিশকে চাপ প্রয়োগ করেন আন্দোলন থামাতে।

কিন্তু সেই মিটিংয়ে উপজেলা পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান সহিদুজ্জামান শাহ, ৫নং ভাবকী ইউপি চেয়ারম্যান রবিউর আলম তুহিন, ৬নং গোয়ালডিহি ইউপি চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন লিটন ও ৪নং খামারপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক স্পষ্ট অবস্থান নেন আন্দোলনের পক্ষে। তাঁরা স্পষ্ট জানান, আন্দোলনকারীদের দমন-নিপীড়ন মেনে নেওয়া হবে না। প্রশাসনের ভেতরেই তৈরি হয় বিভক্তি, যার ফলে পুলিশ আর কোনো বাধা দিতে পারেনি।


কোনো আন্দোলনে বাঁধা দেওয়ার হবে সেই প্রশ্ন তুলেন তৎকালীন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সহিদুজ্জামান শাহ্সহ ৫নং ভাবকী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউর আলম তুহিন, ৬নং গোয়ালডিহি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন লিটন ও ৪নং খামারপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক। প্রতিবাদ শুরু করেন। এরা ছিলেন, জুলাই আন্দোলনের অদৃশ্য শক্তি।

তারা সেই মিটিংয়ে আন্দোলনকারীদের পক্ষে নিয়ে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের বিপক্ষে অবস্থা নেন এবং আন্দোলনকারীদের উপরে দমন নিপীড়ন হলে তা মেনে নেওয়া হবে না।

সেই মিটিংয়ে কোন থাসা হয়ে পড়েন পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতারা। সেই কারণেই পুলিশ আন্দোলনে কোনপ্রকার বাঁধা দিতে পারেননি।

জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে আন্দোলনে অংশগ্রহণ দেখে সাধারণ মানুষ যেভাবে খাদ্য সরবরাহ করেছেন, পাশাপাশি পাশাপাশি সহিদুজ্জামান শাহ্ ও শাহরিয়ার জামান শাহ নিপুর বিভিন্ন মাধ্যমে খাবার সরবরাহসহ আন্দোলন বেগবান বা গতিশীল করার জন্য তরুণদের উদ্বুদ্ধ করেছেন। নিপুন শাহ্ আন্দোলন চলাকালীন সবসময়ই আশপাশের অবস্থা করছিলেন। 

৫নং ভাবকী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউল আলম তুহিন ছাত্র দলের সদস্য সচিব রুবেলের মাধ্যমে আন্দোলন চলাকালীন মাইক ভাড়া খাদ্য সরবরাহ করেছেন।  ছাত্রদের একটি বড় অংশ রুবেল ও জোহার মাধ্যম অংশগ্রহণ করেন।

এই আন্দোলন আবু লোমান রাজু, মেহেদী চৌধুরী ও মহসিন আলী অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। খাদ্য, তোয়ালা,পানি, মোমবাতি, ক্রয়ের অর্থ তারাই বহন করেছে এমনকি নিরাপত্তা ও জনোবলের বড় অংশ যোগান দিয়েন।

৫ তারিখের পর  বকেয়াকৃত মাইক ভাড়া সহিদুজ্জামান শাহ পরিশোধ করছেন এবং গ্রাফিতির জন্য রংরের যে অর্থে ব্যয় হয়েছে তার বড় অংশ তিনিই দিয়েছেন। 
উপরে উল্লেখিত ব্যক্তিদের অবদান অস্বীকার করা অসম্ভব। নিশ্চিত এরা জুলাই আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ পাঠ।

এছাড়াও পুলিশ, ছাত্রলীগ, আওয়ামীলীগের হামলা, মামলার ভয়কে তোয়াক্কা না করে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, অসংখ্যক তরুণ। যাদের মধ্যে ইমতিয়াজ লাবিব, আবির রাজু, শরিফুল, আরাফাত, সেলিম, সেকেন্দার, সোহেল সাব্বির, মঞ্জুরুন, সাজিদ, ফারুক, আবুহেনা গালিব, এম.এইচ লাবিব, শাকিল, হোসেন,জোহা, রহিদুল ইসলাম, রাফি, জাকির,রিফাদ, রাগিব বিকে চৌধুরী, রহিদুল ইসলাম, এনায়েত, গোলাপসহ নাম না জানা (যাদের চেহেরা চিনি কিন্তু নাম মনে নেই) এমন অসংখ্য তরুণ। যারা না থাকলে খানসামায় এতো বড় আন্দোলন করা অসম্ভব ছিলো।

 
সমালোচনা নয়, আত্ম সমালোচনা করুন। জুলাই আন্দোলনের যারাই অংশগ্রহণ করেছেন অবশ্যই আপনাদের অবদান আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনারা প্রত্যেককে আমার কাছে অমূল্য সম্পদ।  

نظری یافت نشد