চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেছেন, ঘোষিত জাতীয় নির্বাচনের তারিখ এখনো গ্রহণযোগ্য নয়, কারণ সংস্কার ও দৃশ্যমান বিচার সম্পন্ন হয়নি। তিনি সতর্ক করে দেন, জনগণের রক্তের মূল্য না দিয়ে তড়িঘড়ি নির্বাচন করলে এর জবাব ইতিহাসের কাছে দিতে হবে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম সরকারের ঘোষিত জাতীয় নির্বাচনের তারিখকে প্রশ্নবিদ্ধ করে বলেছেন, এখনো পর্যন্ত দেশে নির্বাচন করার মতো সমান সুযোগ বা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি। তিনি বলেন, “বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসেনি, তারা এসেছে গণঅভ্যুত্থানের ফসল হিসেবে। এই সরকারের মূল ঘোষণা ছিল সংস্কার, দৃশ্যমান বিচার এবং পরে জাতীয় নির্বাচন। কিন্তু দুঃখের বিষয় আজ যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হলো, সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়ার মতো পরিবেশ তৈরি হয়নি।”
বুধবার বিকেলে ফেনী শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে আয়োজিত গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সমাবেশের মূল দাবি ছিল প্রয়োজনীয় রাষ্ট্রীয় সংস্কার, সকল গণহত্যার বিচার এবং সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে (পিআর সিস্টেম) নির্বাচন।
চরমোনাই পীর রেজাউল করীম বলেন, “আজও সংস্কার হয়নি, দৃশ্যমান বিচার হয়নি। অথচ আপনারা নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছেন। যে হাজারো মায়ের কোল খালি হয়েছে, অগণিত মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করেছে, অসংখ্য তরুণ দৃষ্টি হারিয়েছে—তাদের রক্তের মূল্য আপনারা কীভাবে দেবেন? তাই আমি বলব, আগে সংস্কার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করুন, তারপর নির্বাচন দিন।”
তিনি সুজনের জরিপের তথ্য তুলে ধরে জানান, ৭১ শতাংশ মানুষ পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চান। এই পদ্ধতিতে প্রতিটি ভোটারের মূল্যায়ন হয় এবং কোনো একক দলের ফ্যাসিস্ট সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ থাকে না। বরং সব রাজনৈতিক দল সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পায়। এতে করে স্থানীয় পর্যায়ে যে দখলদার, গুন্ডা ও চাঁদাবাজ চক্র তৈরি হয় তা বন্ধ হবে। এজন্য তিনি সংস্কার, বিচার এবং পিআর পদ্ধতির নির্বাচনকে জাতীয় প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন।
রেজাউল করীম জোর দিয়ে বলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কখনো কোনো অশুভ চক্রের ক্ষমতায় যাওয়ার হাতিয়ার হয়নি। তিনি বলেন, “আমাদের দলকে নিয়ে নানা অপপ্রচার ও গালিগালাজ চলছে। কিন্তু ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রাজনীতি কোনো সম্পদ বা পদমর্যাদার জন্য নয়। ১৯৮৭ সাল থেকে আজ পর্যন্ত বহু সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আমরা সংসদে একজন এমপিও পাঠাইনি। খুনি, চাঁদাবাজ, জুলুমবাজ কিংবা টাকা পাচারকারীদের সিঁড়ি হিসেবে আমরা ব্যবহৃত হইনি, হবও না।”
তিনি আরো বলেন, “৫ আগস্টের পর থেকে দেশের রাজনীতি নতুন মোড়ে দাঁড়িয়েছে। ৫৩ বছরে এ রকম সুযোগ আর আসেনি। এই সুযোগ আমরা কাজে না লাগালে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ইতিহাসে আমাদের অভিশাপ দেবে।”
সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারকে উদ্দেশ্য করে চরমোনাই পীর অভিযোগ করেন, “আপনাদের আমলে হাজারো মা সন্তানহারা হয়েছেন, ২৪ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। এমনকি মানুষকে কষ্ট দেওয়ার জন্য আয়নাঘরের মতো ভয়ঙ্কর তাণ্ডব চালানো হয়েছে। জনগণের চেয়ে বিদেশের স্বার্থকেই অগ্রাধিকার দিয়েছেন আপনারা। কিন্তু আল্লাহর রহমতে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে আওয়াজ তুলেছিল বলেই খুনি ও টাকা পাচারকারীরা দেশ থেকে পালিয়েছে।”
তিনি দাবি করেন, জুলাই অভ্যুত্থানের সময় যখন কোনো রাজনৈতিক দল প্রকাশ্যে নামতে পারেনি, তখন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ রাজপথে ছিল। আজ যারা ক্ষমতার লোভে গুণ্ডামি করছে, তারা যেনতেন নির্বাচনের মাধ্যমে দেশকে আবারও বিদেশি শক্তির কাছে সমর্পণ করতে চায়। কিন্তু এ বার দেশের ইসলামপ্রেমিক ও দেশপ্রেমিক শক্তি ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, আর এই ঐক্যই ক্ষমতালোভীদের বাংলার মাটিতে স্থান দেবে না।
সমাবেশ শেষে ফেনীর তিনটি আসনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন রেজাউল করীম।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ফেনী জেলা সভাপতি মাওলানা গাজী এনামুল হক ভূঞা এবং সঞ্চালনা করেন জেলা সেক্রেটারি মাওলানা একরামুল হক ভূঁইয়া। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, প্রশিক্ষণ সম্পাদক মাওলানা নুরুল করীম আকরাম, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন, ইসলামী যুব আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি প্রকৌশলী আতিকুর রহমান মুজাহিদ, জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা আবদুল হান্নান ও হেফাজতে ইসলামের জেলা সেক্রেটারি মাওলানা ওমর ফারুকসহ অনেকে।
গণসমাবেশে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও এর সহযোগী সংগঠনের জেলা-উপজেলার বিভিন্ন স্তরের হাজারো নেতাকর্মী অংশ নেন।