টানা বর্ষণে কাপ্তাই হ্রদের পানি বেড়ে এক মাস ধরে তিন ফুট পানির নিচে ডুবে আছে রাঙামাটির বিখ্যাত ঝুলন্ত সেতু। এতে হতাশ হয়ে ফিরছেন হাজারো পর্যটক, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সরকারের রাজস্ব।
রাঙামাটি জেলা বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ পর্যটনকেন্দ্র। পাহাড়, হ্রদ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য দেশি-বিদেশি ভ্রমণপিপাসুরা সারা বছর ভিড় জমান এই জনপদে। আর রাঙামাটির পর্যটনের মূল প্রতীক হয়ে উঠেছে বিখ্যাত ঝুলন্ত সেতু। ১৯৮৫ সালে নির্মিত এই দৃষ্টিনন্দন সেতুটি কাপ্তাই হ্রদের বুকে দাঁড়িয়ে আছে দীর্ঘ ৩৩৫ ফুটজুড়ে। প্রতিবছর কয়েক লাখ পর্যটক শুধু এই সেতুটি এক নজর দেখার জন্য ছুটে আসেন রাঙামাটিতে।
তবে চলতি বর্ষা মৌসুমে সেই সেতুই এখন পর্যটকদের কাছে হতাশার প্রতীক হয়ে উঠেছে। কারণ গত ৩০ জুলাই থেকে কাপ্তাই হ্রদের পানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গিয়ে সেতুটি ডুবতে শুরু করে। আজ অবধি পুরো এক মাস হয়ে গেল, কিন্তু এখনো প্রায় তিন ফুট পানির নিচে রয়ে গেছে ঝুলন্ত সেতুটি। ফলে কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তার স্বার্থে পর্যটকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে।
প্রতিদিন বিশেষ করে শুক্র, শনি ও সরকারি ছুটির দিনে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শত শত পর্যটক রাঙামাটির উদ্দেশ্যে রওনা দেন। অনেকে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঘুরতে আসেন শুধু এই ঝুলন্ত সেতুটি দেখার জন্য। কিন্তু এসে দেখছেন, কাঙ্ক্ষিত সেই সেতুটি পানির নিচে তলিয়ে আছে। ফলে নিরাশ হয়ে তাদের ফিরতে হচ্ছে। পর্যটকরা বলছেন, অনেক দূর থেকে কষ্ট করে এসেছেন কিন্তু আসার আগে সেতুটি পানিতে ডুবে আছে তা জানতেন না। ডুবন্ত অবস্থায় দেখে খুবই খারাপ লাগছে।
পর্যটন কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রতিদিন অন্তত ২০-৩০ হাজার টাকা রাজস্ব আয় হতো এই সেতুতে ভ্রমণকারীদের প্রবেশমূল্য থেকে। প্রতি বছর প্রায় কোটি টাকার কাছাকাছি রাজস্ব আসে এখান থেকে। কিন্তু বর্তমানে সেতুটি ডুবে যাওয়ায় সেই রাজস্ব আয় বন্ধ হয়ে গেছে। এভাবে দীর্ঘ তিন থেকে চার মাস বর্ষাকালে ডুবে থাকার কারণে সরকারি রাজস্ব ও পর্যটন শিল্প উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
রাঙামাটি পর্যটন মোটেল ও হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা জানান, পানির উচ্চতা ১০৭ ফুট ছাড়ালেই সেতুটি ডুবে যায়। চলতি বর্ষায়ও তাই হয়েছে। পর্যটকদের নিরাপত্তায় সেতুতে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের কাছে একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে, যাতে আধুনিক প্রযুক্তিতে নতুন একটি সেতু তৈরি করা যায়। এটি বাস্তবায়ন হলে ভবিষ্যতে বর্ষায় আর এ ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে না।
পর্যটকরা বলছেন, সেতুটি রাঙামাটির প্রাণ। এটিকে ঘিরেই পর্যটনের প্রাণচাঞ্চল্য তৈরি হয়। অথচ প্রতিবার বর্ষা মৌসুমে একই সমস্যার কারণে হতাশ হতে হচ্ছে ভ্রমণপিপাসুদের। তাদের দাবি, অবিলম্বে সেতুটির স্থায়ী সমাধান করতে হবে, যাতে বর্ষায় পানিতে তলিয়ে না যায়।
প্রকৃতির সৌন্দর্যের অন্যতম নিদর্শন এই ঝুলন্ত সেতুটি নিয়ে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যটন সংশ্লিষ্টদেরও রয়েছে একই দাবি। তারা বলছেন, সেতুটিকে আরও উঁচু করে তৈরি করা হলে বা নতুন করে আধুনিক সেতু নির্মাণ করা হলে বর্ষাকালেও পর্যটকদের জন্য এটি উন্মুক্ত রাখা সম্ভব হবে। তাতে সরকার যেমন রাজস্ব আয় বাড়াতে পারবে, তেমনি দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সন্তুষ্টি বাড়বে বহুগুণ।
ফলে এক মাস ধরে পানির নিচে ডুবে থাকা রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতুটি শুধু একটি স্থাপনা নয়, বরং দেশের পর্যটন খাতের এক বড় সংকটের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন দেখার বিষয়, কর্তৃপক্ষ কবে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়, যাতে আগামী বর্ষায় আর এই সেতুকে পানির নিচে হারিয়ে না ফেলতে হয়।