এক বছরে সরকারের ১২ সাফল্য তুলে ধরলেন প্রেস সচিব

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
One year after Sheikh Hasina's resignation, the interim government has marked 12 major achievements. Press Secretary Shafiqul Alam highlights progress in stability, economy, justice, democracy, a..

পদত্যাগের এক বছর পর অন্তর্বর্তী সরকারের অভাবনীয় ১২টি সফলতা নিয়ে মুখ খুললেন প্রেস সচিব শফিকুল আলম। শান্তি, অর্থনীতি, বিচার, বিদেশনীতি থেকে শুরু করে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় এই সরকার কতটা এগিয়েছে জানুন বিস্তারিত।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এক দীর্ঘ রাজনৈতিক অধ্যায়ের ইতি ঘটে। তার প্রায় ১৫ বছরের শাসনের পর আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার চাপে তিনি দেশ ত্যাগে বাধ্য হন। এরপর ৮ আগস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়, যা আগামীকাল তার এক বছর পূর্ণ করতে যাচ্ছে।

এই এক বছরে সরকার সফল না ব্যর্থ—তা নিয়ে জনমনে নানা আলোচনা থাকলেও, সরকারের পক্ষ থেকে এক ইতিবাচক বার্তা তুলে ধরেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। বৃহস্পতিবার সকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি স্ট্যাটাসে তিনি সরকারের ১২টি মূল অর্জনের তালিকা প্রকাশ করেন।

১. শান্তি ও স্থিতিশীলতার পুনঃপ্রতিষ্ঠা

জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর যেভাবে দেশজুড়ে অরাজকতা ও সহিংসতা দেখা দিয়েছিল, তা সফলভাবে দমন করে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হয়েছে। প্রতিশোধ নয়, পুনর্মিলনের রাজনীতি প্রতিষ্ঠায় মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

২. অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার

খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪% থেকে অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়েছে। সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি ৮.৪৮ শতাংশে নেমে এসেছে, যা গত ৩৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। প্রবাসী আয় ৩০.৩৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। রপ্তানি বেড়েছে ৯ শতাংশ এবং টাকার মান ডলারের বিপরীতে শক্তিশালী হয়েছে।

৩. বাণিজ্য ও বিদেশি বিনিয়োগ

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক চুক্তিতে ইতিবাচক সমাপ্তি হয়েছে, যা অনেকেই সন্দেহ করেছিল এই সরকার পারবে না। হান্ডা গ্রুপ ২৫ কোটি ডলারের বিনিয়োগে ২৫,০০০ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে। দ্বিগুণ হারে বিদেশি বিনিয়ন নিশ্চিত হয়েছে, বিশেষ করে চীন ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে।

৪. গণতান্ত্রিক সংস্কার ও 'জুলাই সনদ'

৩০টির বেশি রাজনৈতিক দলের ঐক্যে গঠিত সংস্কার কমিশনের মাধ্যমে ‘জুলাই সনদ’ প্রণয়ন করা হয়েছে, যা ভবিষ্যতে একনায়কতন্ত্র প্রতিরোধে আইনি কাঠামো তৈরি করবে। এই সনদকে গণতন্ত্রের নতুন দিগন্ত হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

৫. জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার

জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে চারটি বড় মামলায় বিচার চলছে। শেখ হাসিনাসহ বেশ কিছু প্রভাবশালী নেতার বিচার প্রক্রিয়া এগিয়ে চলছে।

৬. স্বচ্ছ নির্বাচন পরিকল্পনা

২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক এবং উৎসবমুখর জাতীয় নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রথমবারের মতো তরুণ ভোটার ও প্রবাসীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ৮ লাখ নিরাপত্তা সদস্য নিয়োগের পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়েছে।

৭. আইন ও প্রতিষ্ঠান সংস্কার

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা এবং পুলিশের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে নতুন প্রোটোকল ও প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু হয়েছে। মানবাধিকার সেল, বডি ক্যামেরা ও অনলাইন জিডি চালু হয়েছে। ফৌজদারি ও দেওয়ানি আইনে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনা হয়েছে।

৮. গণমাধ্যম ও ইন্টারনেট স্বাধীনতা

দমনমূলক সাইবার আইন বাতিল, সাংবাদিকদের মামলা প্রত্যাহার এবং ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। সমালোচনার স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

৯. বিদেশনীতি ও কূটনৈতিক ভারসাম্য

একক দেশ নির্ভরতা বাদ দিয়ে বহুমুখী কূটনীতিতে জোর দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করা হয়েছে। সার্ককে সক্রিয় করার চেষ্টা ও আসিয়ান সদস্যপদ পাওয়ার প্রচেষ্টা চলছে।

১০. প্রবাসী অধিকার ও শ্রমবাজার

আমিরাতে ভিসা চালু, মালয়েশিয়ায় একাধিকবার প্রবেশের ভিসা, অবৈধ শ্রমিকদের বৈধতা, জাপানে এক লাখ তরুণ পাঠানোর পরিকল্পনা এবং ইতালি, কোরিয়া, সার্বিয়ায় শ্রমবাজার সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

১১. বিপ্লবীদের জন্য পুনর্বাসন ও সহায়তা

৭৭৫ শহীদ পরিবারের মাঝে ১০০ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র ও ভাতা এবং ১৩,৮০০ আহতদের মাঝে ১৫৩ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। গুরুতর আহতদের বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

১২. সমুদ্র অর্থনীতি ও অবকাঠামো

বঙ্গোপসাগরকে ‘জলভিত্তিক অর্থনীতির মূল’ ঘোষণা দিয়ে গভীর সমুদ্র প্রকল্প, উপকূলীয় উন্নয়ন ও চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে।

এই অর্জনগুলোর প্রেক্ষিতে জনগণের মধ্যে আশাবাদী ভাব তৈরি হলেও, একাংশের প্রশ্ন—সরকার কি প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারবে? গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রাশেদ খান মন্তব্য করেছেন, শুধু হাসিনার পতন নয়, নতুন রাষ্ট্র গড়তে না পারলে আন্দোলনের অর্থ থাকবে না।

لم يتم العثور على تعليقات