close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

এবার বাংলাদেশ বিমানের ১০ চাকা চুরি !

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
A shocking scandal has hit Biman Bangladesh Airlines as 10 aircraft tires worth nearly one crore taka allegedly went missing and were handed over illegally. Authorities have launched a full investigat..

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজের ১০টি ব্যবহৃত চাকা চুরি ও অবৈধ হস্তান্তরের অভিযোগে ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়েছে। কোটি টাকার এই চাকা কেলেঙ্কারিকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে তদন্ত।

বাংলাদেশ বিমানের ইতিহাসে এক নতুন বিতর্কের সূচনা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজের ১০টি ব্যবহৃত চাকা রহস্যজনকভাবে উধাও হয়ে গেছে। চাকার এই অদৃশ্য হওয়ার ঘটনায় সংস্থার ভেতরে চরম আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বিমানের দুই কর্মী অনুমতি ছাড়াই এই চাকাগুলো এক বেসরকারি এয়ারলাইন্সের এক কর্মকর্তার হাতে তুলে দিয়েছেন। কোটি টাকার এই চাকা চুরির ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে বিমান কর্তৃপক্ষ।

বিমানবন্দর থানায় বিমানের সহকারী ব্যবস্থাপক (নিরাপত্তা) মোশারেফ হোসেন গত সোমবার একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। সেখানে উল্লেখ করা হয়, ১৬ আগস্ট সন্ধ্যায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের হ্যাঙ্গার কমপ্লেক্সের পাশের অকশন শেডে রাখা ১০টি আনসার্ভিসেবল টায়ার আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। অনুসন্ধানে জানা যায়, বিমানের ম্যাটেরিয়াল ম্যানেজমেন্ট সুপারভাইজার আরমান হোসেন ও স্টোর হেলপার সামসুল হক চাকাগুলো ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের এক কর্মকর্তাকে দিয়ে দিয়েছেন, অথচ এ বিষয়ে কোনো অনুমোদন নেয়া হয়নি।

বিমানের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, একেকটি বিমানের চাকার দাম পাঁচ থেকে ১৫ হাজার ডলার। সেই হিসাবে প্রায় এক কোটি টাকার সম্পদ হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। যদিও চাকাগুলো ব্যবহৃত ছিল, তবুও সেগুলো অকশন শেডে সংরক্ষিত ছিল। তিনি বলেন, বিষয়টি নিছক অবহেলা নয়, বরং ইচ্ছাকৃত কারসাজির ফলাফল হতে পারে।

বিমানবন্দর থানার ওসি তাসলিমা আক্তার জানিয়েছেন, বিমানের পক্ষ থেকে জিডি করা হয়েছে এবং নিয়ম অনুযায়ী তদন্ত চলছে। অন্যদিকে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।

চাকা চুরির এই কেলেঙ্কারির সঙ্গে সঙ্গে আবারও সামনে এলো বিমানের রক্ষণাবেক্ষণ সংকট। গত এক মাসে অন্তত আটবার বিমানের বোয়িং উড়োজাহাজ যান্ত্রিক ত্রুটির মুখে পড়ে। ফ্লাইট শিডিউল বিপর্যয়, যাত্রী ভোগান্তি ও বারবার টেকনিক্যাল সমস্যা সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থা কমিয়ে দিয়েছে। এমনকি ফ্লাইট চলাকালীন সময়ে চাকা ফেটে যাওয়া ও যান্ত্রিক গোলযোগের মতো ভয়ঙ্কর ঘটনাও ঘটেছে।

এসব ঘটনার পর মঙ্গলবার বিমান এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানায়, যাত্রী সুরক্ষা ও সেবার মান সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাবে। প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করা হবে এবং দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ জন্য চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, যারা প্রতিটি ঘটনার রেকর্ড পরীক্ষা করে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করবে এবং পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে করণীয় নির্ধারণ করবে।

ইতোমধ্যেই কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। দায়িত্বে অবহেলার কারণে একজন প্রকৌশলী কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে এবং আরও কয়েকজনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি চট্টগ্রামে কর্মরত একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিমানের বিভিন্ন আউটস্টেশনে (যেমন জেদ্দা, দুবাই, মদিনা, আবুধাবি, শারজাহ ইত্যাদি) অতিরিক্ত চাকা মজুদ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যাতে প্রয়োজনে দ্রুত প্রতিস্থাপন সম্ভব হয়।

শুধু তাই নয়, ১৮ আগস্ট থেকে রাতের বিশেষ রক্ষণাবেক্ষণ শিফট চালু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রতিদিনের কার্যক্রম আরও ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে। ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম পুনর্বিবেচনা করা হচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক নির্মাতা বোয়িংয়ের সঙ্গে আলোচনা করে যন্ত্রাংশ ব্যবস্থাপনা আরও শক্তিশালী করার পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

এছাড়া, প্রকৌশলীদের জন্য রি-কারেন্ট প্রশিক্ষণ চালু করা হয়েছে এবং নতুন শিক্ষানবিশ মেকানিক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিমান আশা করছে, এই পদক্ষেপগুলো দীর্ঘমেয়াদে প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বাড়াবে এবং যাত্রীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করবে।

তবে, কোটি টাকার ১০ চাকা রহস্যজনকভাবে উধাও হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে নতুন প্রশ্ন উঠেছে—রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমানের ভেতরে এত বড় অনিয়ম কীভাবে ঘটল? তদন্ত শেষ হলে সত্যিই কি প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করা যাবে? নাকি এই কেলেঙ্কারি আবারও ধামাচাপা পড়ে যাবে?

এই ঘটনার পর সাধারণ যাত্রী ও নাগরিকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। অনেকেই বলছেন, বিমানের মতো একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে যদি এমন দুর্নীতি হয়, তবে যাত্রী নিরাপত্তা কিভাবে নিশ্চিত হবে?

বিমান কর্তৃপক্ষ অবশ্য আশ্বাস দিয়েছে, চাকা চুরির ঘটনায় জড়িতদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে এলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং দায়ী কর্মীরা শাস্তি পাবেন। এখন দেখার বিষয়—এই আশ্বাস কতটা বাস্তবায়ন হয়, আর কোটি টাকার চাকা চুরির এই কাহিনি কোথায় গিয়ে থামে।

Ingen kommentarer fundet