আশুলিয়ার গাজীরচটে রাসেল গাজীকে গুলি করে হত্যার মামলায় সাবেক মন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ও হাসানুল হক ইনুকে গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
জুলাই অভ্যুত্থানের উত্তাল সময় চলাকালীন ঢাকার আশুলিয়ায় সংগঠিত একটি হত্যা মামলায় চাঞ্চল্যকর মোড় নিয়েছে। গুলি করে রাসেল গাজী (২৭) নামের এক যুবককে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় সাবেক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন আদালত গ্রহণ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তাজুল ইসলাম সোহাগ এই আদেশ দেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক মো. আনোয়ার হোসেন আদালতে পলককে হাজির করে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করলে বিচারক শুনানি শেষে তা মঞ্জুর করেন।
পলকের পক্ষে আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিন রাখি বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। আদালতের আদেশে উল্লেখ করা হয় যে, মামলার তদন্তের স্বার্থে এবং সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার দেখানো আবশ্যক।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সকাল ১১টার দিকে আশুলিয়ার গাজীরচট এলাকায় ‘জুলাই অভ্যুত্থান’ চলার সময় রাসেল গাজী নামের যুবকটি আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। এ সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ছোড়া গুলিতে তিনি গুরুতর আহত হন।
স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। নিহত রাসেল গাজী আশুলিয়ার গাজীরচট মধ্যপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তার বাবা বেলায়েত গাজী ও মা সেলিনা বেগম—দুজনেই এই মামলার সাক্ষী হিসেবে রয়েছেন।
হত্যাকাণ্ডের প্রায় ১০ দিন পর, ১৫ আগস্ট ২০২৪ সালে জুনাইদ আহমেদ পলক এবং ২৫ আগস্ট হাসানুল হক ইনুকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রাথমিকভাবে গ্রেপ্তার করে। তবে তাদের বিরুদ্ধে সরাসরি এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি তখন। দীর্ঘ তদন্ত শেষে, নতুন করে তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করে তদন্ত কর্মকর্তা আদালতের কাছে আবেদন জানান, যাতে তাদের এই হত্যা মামলায় সরাসরি আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখানো যায়।
বিচারক তাজুল ইসলাম সোহাগ এই আবেদন বিবেচনায় নিয়ে তা মঞ্জুর করেন এবং পুলিশকে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।
এই গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। সরকারি ও বিরোধী দলের নেতাদের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে জনগণের প্রতিক্রিয়াও মিশ্র। কেউ কেউ এটিকে বিচারপ্রক্রিয়ার অংশ মনে করলেও, অনেকেই বলছেন—এটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ হতে পারে।
এই মামলাটি এখন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে উঠেছে। আদালতের পরবর্তী পদক্ষেপ এবং তদন্ত কতদূর পর্যন্ত যায়, তা নিয়ে দেশের মানুষ এখন গভীরভাবে নজর রাখছে।