ওপেনএআই প্রধান স্যাম অল্টম্যান সতর্ক করেছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) মানুষের কিছু পেশাকে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করে দিতে পারে। কাস্টমার সার্ভিস ও স্বাস্থ্যসেবা খাতে বড় পরিবর্তন আসছে।
বিশ্ব প্রযুক্তি অঙ্গনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) দাপট বেড়েই চলেছে। এই উদীয়মান প্রযুক্তির প্রভাব বিশ্বব্যাপী মানুষের জীবনযাত্রা ও কর্মসংস্থানের ধরনকে আমূল বদলে দিচ্ছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে আয়োজিত ফেডারেল রিজার্ভের এক সম্মেলনে ওপেনএআই-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্যাম অল্টম্যান সরাসরি ঘোষণা দিয়েছেন—এআইয়ের ব্যাপক প্রসারের কারণে ভবিষ্যতে কিছু পেশা পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে।
তিনি বলেন, “বিশেষ করে কাস্টমার সার্ভিসের মতো সেক্টরে মানুষের বিকল্প হিসেবে এআই এখন এতটাই দক্ষ হয়ে উঠেছে যে, সেখানে মানবকর্মীর প্রয়োজন হয়তো একেবারেই থাকবে না।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়, অল্টম্যান স্পষ্টভাবে বলেছেন, “আপনি যখন কোনো কাস্টমার সার্ভিসে ফোন করছেন, ধরেই নিন সেটি এখন একটি এআই পরিচালিত সিস্টেম। এবং তাতে কোনো সমস্যাও নেই।”
তিনি আরও বলেন, এআই আজ এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে তা জটিল প্রশ্নেরও নির্ভুল উত্তর দিতে পারে। কোনো ভুল হয় না এবং গ্রাহককে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষাও করতে হয় না। এটি এখন মানুষের একটি কার্যকর বিকল্প।
এই বিবৃতি অনেকের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি করেছে যে, অদূর ভবিষ্যতে গ্রাহকসেবার মতো বড় কর্মক্ষেত্রে লাখ লাখ মানুষের চাকরি হুমকির মুখে পড়তে পারে।
স্যাম অল্টম্যান চিকিৎসা খাত নিয়েও মত প্রকাশ করেন। তিনি জানান, “চ্যাটজিপিটির মতো এআই মডেল এখন এমন দক্ষতায় পৌঁছেছে, যেখানে তা রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে অনেক ক্ষেত্রেই মানুষের চেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত দিতে সক্ষম।”
তবে এক্ষেত্রে তিনি এক ধরনের মানবিক ভারসাম্যের আহ্বান জানিয়েছেন। “আমি নিজে যদি কখনো চিকিৎসা নিতে যাই, সেখানে একজন মানব চিকিৎসকের উপস্থিতি চাইব। শুধুমাত্র যন্ত্রের ওপর নির্ভর করতে চাই না,”— বলেন অল্টম্যান।
এআই প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে সামনে রেখে ওপেনএআই ওয়াশিংটন ডিসিতে তাদের কার্যক্রম আরও সম্প্রসারণের ঘোষণা দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সেখানে একটি অফিস চালু করতে যাচ্ছে, যা সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ের একটি ইঙ্গিত বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এছাড়া, ইন্ডিয়া টুডের বরাত দিয়ে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন 'এআই অ্যাকশন প্ল্যান' অনুযায়ী দেশজুড়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়ন, অবকাঠামো তৈরি এবং গবেষণায় জোর দেওয়া হচ্ছে। ফলে অল্টম্যানের এই সফরকে অনেকেই দেখছেন সরকার ও বেসরকারি খাতের মধ্যে এক নতুন ধারা গঠনের সূচনা হিসেবে।
তবে এআই শুধু সম্ভাবনা নয়, এর সঙ্গে রয়েছে গুরুতর ঝুঁকিও। এ বিষয়ে স্যাম অল্টম্যান বলেন, “ভয়েস ক্লোনিং প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক খাতে প্রতারণা এখনই চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবচেয়ে বড় উদ্বেগ হচ্ছে, কোনো রাষ্ট্রীয় বা সন্ত্রাসী সংগঠন যদি এআই ব্যবহার করে বড় ধরনের সাইবার হামলা চালায়, বিশেষ করে আর্থিক খাতে।”
এই সতর্কবার্তায় বোঝা যাচ্ছে, এআই প্রযুক্তির সাফল্যের পাশাপাশি এটি নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও এখন সময়ের চাহিদা।
প্রযুক্তির এই যুগে মানুষের কর্মক্ষেত্র কীভাবে রূপ নেবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে স্যাম অল্টম্যানের হুঁশিয়ারি আমাদের প্রস্তুত থাকার বার্তাই দিচ্ছে।