ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)-এর সভাপতি আবু সালেহ আকন সাংবাদিকতার আদর্শ ও দায়িত্ব নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, সাংবাদিকতা কেবল একটি পেশা নয়, এটি দেশ ও জাতির প্রতি দায়বদ্ধতার একটি মহৎ অঙ্গীকার।
আবু সালেহ আকন বলেন, সাংবাদিকতার পবিত্রতা নষ্ট হয় তখনই যখন সাংবাদিকরা নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করেন। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, যাদের একসময় সমাজ দেবতার আসনে বসিয়েছিল, দলকানা সাংবাদিকতার কারণে আজ তারা কেউ কারাগারে, কেউ পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এই পরিস্থিতি আমাদের জন্য এক ধরনের সতর্কবার্তা। তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, "সাংবাদিকতা করতে হলে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। নিজেদের মধ্যে স্বচ্ছ চিন্তা-ভাবনা থাকতে হবে। অপ-সাংবাদিকতা রোধে প্রত্যেককে প্রস্তুত হতে হবে।"
তিনি আরও বলেন, দলকানা কাজের ফলে দেশের জাতীয় মসজিদের ইমামকেও পালিয়ে যেতে হয়েছে। এটি প্রমাণ করে যে, অসৎ ও পক্ষপাতমূলক কাজ কখনও দীর্ঘস্থায়ী হয় না। সাংবাদিকদের উচিত নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখা এবং সত্যকে তুলে ধরা।
এ সময় তিনি সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন। তার মতে, সাংবাদিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে হলে সবাইকে একত্রে কাজ করতে হবে। বিভক্ত হয়ে কেউ সফল হতে পারে না, কিন্তু ঐক্যবদ্ধ হলে যে কোনো আন্দোলন সফল হয়।
১৬ আগস্ট শনিবার সকাল ১১টায় ডেমরার সুলতান ফুড ল্যান্ড রেস্টুরেন্টে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি ছিল এক প্রাণবন্ত মিলনমেলা, যেখানে সাংবাদিকদের অভিজ্ঞতা ও মতামত ভাগাভাগি করার সুযোগ তৈরি হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দৈনিক সংবাদের মফস্বল সম্পাদক ও ঢাকা বিভাগ সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি মো: আলম হোসেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন এশিয়া টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার শহীদুল্লাহ গাজী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পলিটিক্যাল রিপোর্টার্স ফোরামের যুগ্ম সম্পাদক সফিকুল ইসলাম ও সাংবাদিক সালেহ আহম্মেদ। এছাড়াও স্থানীয় সাংবাদিকরা অংশগ্রহণ করেন এবং অনুষ্ঠানটিকে প্রাণবন্ত করে তোলেন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, সাংবাদিকতা এমন একটি পেশা যেখানে সঠিক তথ্য, নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি এবং মানুষের কল্যাণই হওয়া উচিত মূল লক্ষ্য। দলীয় প্রভাব বা ব্যক্তিগত স্বার্থ সাংবাদিকতার পবিত্রতা নষ্ট করে। এজন্য সকল সাংবাদিককে নিজেদের মধ্যে নৈতিকতা, সাহস এবং পেশাগত সততা বজায় রাখতে হবে।
অনুষ্ঠানজুড়ে সাংবাদিকরা একমত হন যে, বর্তমান সময়ে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষার জন্য সম্মিলিত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। সত্য প্রকাশে সাংবাদিকদের কোনো ভয় পাওয়া উচিত নয়। সত্যিই যদি সাংবাদিকরা ঐক্যবদ্ধ হন, তবে কোনো শক্তিই তাদের দমাতে পারবে না।
এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা ছড়িয়ে পড়ে—সাংবাদিকতা কেবল খবর পরিবেশনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটি সমাজ পরিবর্তনের অন্যতম হাতিয়ার। সাংবাদিকদের উচিত নিজেদের আদর্শে অটল থেকে সমাজের দুর্বল, বঞ্চিত ও নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়ানো।
আবু সালেহ আকনের বক্তব্য সাংবাদিকদের নতুন করে অনুপ্রাণিত করেছে। তার আহ্বান ছিল স্পষ্ট—"দলকানা নয়, আদর্শ সাংবাদিকতা গড়ে তুলুন, তাহলেই সমাজের আস্থা ফিরে আসবে সাংবাদিকদের প্রতি।"