গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বিএনপির কার্যালয় ‘পাপমোচনের’ উদ্দেশ্যে দুধ দিয়ে ধোয়ার ঘটনায় দুই ছাত্রদল নেতাকে শোকজ করা হয়েছে এবং তারেক রহমানকে নিয়ে কটুক্তির দায়ে এক যুবদল নেতাকে আজীবন বহিষ্কার করেছে কেন্দ্র।
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের দুই নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি। দলীয় কার্যালয়ে একমন দুধ ঢেলে 'পাপমোচন' করার ঘটনায় এই কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হয়। পাশাপাশি, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করায় একজন যুবদল নেতাকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। এই দুটি ঘটনা স্থানীয় এবং কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
ঘটনার সূত্রপাত গত ৬ আগস্ট রাতে, যখন কালিয়াকৈর উপজেলা বিএনপির কার্যালয়কে ‘শুদ্ধ’ করার লক্ষ্যে একমন দুধ দিয়ে ধুয়ে ফেলা হয়। এই কর্মকাণ্ড ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করলে মুহূর্তেই তা ভাইরাল হয়ে পড়ে। ভিডিওতে উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. তুহিন হোসেন ও মো. মিঠুন হোসেনকে দেখা যায় দুধ ঢালতে এবং বলতে, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের কিছু দোসর বিএনপি অফিসে প্রবেশ করে। এতে অফিস পাপযুক্ত হয়েছে। তাই দুধ দিয়ে পাপ মোচন করা হচ্ছে।
এই মন্তব্য এবং কাজের ফলে উপজেলা ও জেলা ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে একে দলীয় শৃঙ্খলার পরিপন্থী এবং নেতিবাচক বার্তা হিসেবে দেখেন। বিএনপির নেতাকর্মীদের একাংশ মনে করেন, এমন প্রতীকী কাজ দলকে বিতর্কিত করতে পারে এবং নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত করে।
৭ আগস্ট রাতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত চিঠিতে জানানো হয়, অভিযুক্ত দুই ছাত্রদল নেতাকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সামনে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে হবে। এই চিঠি রাতেই ফেসবুক ও অন্যান্য মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যার ফলে দলের ভেতরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
এ বিষয়ে কালিয়াকৈর উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জাফর ইকবাল জনি বলেন, "দলের সিদ্ধান্ত সবার মানতেই হবে। কেন্দ্রীয় কমিটি যে নির্দেশনা দিয়েছে, অভিযুক্ত নেতারা নিশ্চয়ই গঠনতন্ত্র মেনেই উত্তর দেবেন।"
অন্যদিকে, একই দিনে আরেকটি বড় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তারেক রহমান সম্পর্কে ‘অপমানজনক’ মন্তব্য করার অভিযোগে উপজেলা যুবদলের সদস্য মো. লিটন দেওয়ানকে আজীবন বহিষ্কার করে জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটি। সহ-দপ্তর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভুইয়া স্বাক্ষরিত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, দলীয় আদর্শবিরোধী বক্তব্য এবং শৃঙ্খলা লঙ্ঘনের দায়ে এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
পৌর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রেজভী আহমেদ দুলাল বলেন, “কাউকে অপমান করে দলীয় কার্যালয় দুধ দিয়ে ধোয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি নিন্দনীয় কাজ এবং দলের ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।”
অভিযুক্তদের মধ্যে মো. তুহিন হোসেনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের ঘটনাগুলো দলীয় ঐক্য ও শৃঙ্খলার জন্য হুমকি। বিশেষ করে বিরোধী রাজনৈতিক অবস্থানে থাকা একটি দলের জন্য এমন বিতর্কিত কর্মকাণ্ড জনসমর্থনেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।