দলের কর্মকাণ্ড ও নীতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে ফরিদপুরের সমন্বয় কমিটির সদস্য রুবেল মিয়া (হৃদয়) এনসিপির সব পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। সম্প্রতি শিবচরে একসঙ্গে চার নেতার পদত্যাগের পর এ ঘটনা সংগঠনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আবারও অভ্যন্তরীণ সংকটে পড়ল। ফরিদপুর জেলা সমন্বয় কমিটির সদস্য মো. রুবেল মিয়া (হৃদয়) আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করেছেন। রোববার (১০ আগস্ট) রাতে ফরিদপুর জেলা সমন্বয় কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী সৈয়দা নীলিমা দোলার কাছে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন।
পদত্যাগপত্রে রুবেল মিয়া লিখেছেন, দীর্ঘদিন ধরে এনসিপির ফরিদপুর জেলার একজন দায়িত্বশীল কর্মী হিসেবে কাজ করলেও, সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড তাকে গভীরভাবে হতাশ করেছে। তিনি অভিযোগ করেন, দলের কার্যক্রম ও সিদ্ধান্তগুলো ‘জুলাই বিপ্লবের নীতি ও নৈতিকতার’ পরিপন্থী হয়ে পড়েছে এবং বর্তমান পথচলা তার ব্যক্তিগত আদর্শ ও মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
তার ভাষায়, “এমতাবস্থায় আমি আর দলের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারছি না। তাই বিনীতভাবে জাতীয় নাগরিক পার্টি, ফরিদপুর জেলার সব কার্যক্রম ও পদ থেকে পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করছি।”
প্রধান সমন্বয়কারী সৈয়দা নীলিমা দোলা গণমাধ্যমকে জানান, “আমরা রুবেল মিয়াকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি, কিন্তু তিনি তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন। ফলে তার পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়েছে। পদত্যাগপত্রের কপি এখনও তাকে দেওয়া হয়নি, তবে দুয়েক দিনের মধ্যে তা পৌঁছে দেওয়া হবে।”
এই সমন্বয় কমিটি গঠিত হয়েছিল গত ৫ জুন, যখন এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সদস্যসচিব আখতার হোসেনের যৌথ স্বাক্ষরে ২৩ সদস্যবিশিষ্ট ফরিদপুর কমিটি অনুমোদন পায়। এতে প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পান সৈয়দা নীলিমা দোলা, ৫ জনকে যুগ্ম সমন্বয়কারী এবং বাকি ১৭ জনকে সদস্য করা হয়।
ফরিদপুরে এই পদত্যাগের ঘটনা ঘটে মাত্র একদিন পর, যখন মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা সমন্বয় কমিটি থেকে একসঙ্গে চার নেতা পদত্যাগ করেন। গত ৯ আগস্ট শিবচর প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে যুগ্ম সমন্বয়কারী শাকিল খান, সদস্য মো. রিয়াজ রহমান, সদস্য মহিউদ্দিন ও সদস্য কাজী রফিক পদত্যাগের ঘোষণা দেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন রিয়াজ রহমান।
টানা দুই দিনে দুই জেলা থেকে মোট পাঁচ নেতার পদত্যাগ এনসিপির অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দলের অভ্যন্তরে নীতি, নেতৃত্ব ও ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা নিয়ে অসন্তোষ বাড়ছে। বিশেষ করে ‘জুলাই বিপ্লবের আদর্শ’ থেকে সরে আসা এবং বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ নেতাদের আস্থার সংকট তৈরি করছে।
ফরিদপুর ও শিবচরের এই পদত্যাগের ঘটনাগুলো কেবল সাংগঠনিক নয়, বরং রাজনৈতিক বার্তাও বহন করছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। তারা মনে করছেন, যদি দলের শীর্ষ নেতৃত্ব দ্রুত অভ্যন্তরীণ সংকট সমাধানে উদ্যোগী না হয়, তবে পদত্যাগের এই ধারা অন্যান্য জেলাতেও ছড়িয়ে পড়তে পারে, যা এনসিপির রাজনৈতিক অবস্থানকে দুর্বল করে দেবে।
দলটির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বড় প্রতিক্রিয়া এখনও না এলেও, মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা বিষয়টিকে গভীর উদ্বেগের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছেন। এখন দেখার বিষয়, এনসিপি নেতৃত্ব কীভাবে এই সংকট মোকাবিলা করে দলকে একত্রিত রাখতে পারে।