ডিসেম্বরে প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা: ইসি সানাউল্লাহ..

Mahamud Mithu avatar   
Mahamud Mithu
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ডিসেম্বর মাসের প্রথমার্ধে ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। প্রবাসী ভোটারদের জন্য পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতি কার্যকর করা হবে।..

নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে আয়োজিত কমিশনের নবম সভা শেষে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন। তিনি জানান, ডিসেম্বর মাসের প্রথমার্ধেই এ তফসিল ঘোষণা করার পরিকল্পনা রয়েছে। 

সানাউল্লাহ বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ইতোমধ্যেই যে সময়সীমা উল্লেখ করেছেন, সেই অনুযায়ী আনুমানিক দুই মাস আগে তফসিল ঘোষণা করা হবে। সেই হিসেবে তফসিল ডিসেম্বরের প্রথমার্ধেই ঘোষণা করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।’ প্রধান উপদেষ্টার চিঠি সম্পর্কিত আলোচনা বিষয়ে তিনি জানান, ‘এটি অচিরেই কমিশনে আলোচনার জন্য তোলা হবে।’ 

তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের জন্য প্রণীত ‘আচরণবিধিমালা ২০২৫’ চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ বিধিমালা খসড়া অনলাইনে প্রকাশ করে জনমত সংগ্রহ করা হয়েছিল এবং জনমতের আলোকে প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হয়েছে। 

এবারের নির্বাচনে দেশের বাইরে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতি কার্যকর করা হবে। প্রবাসীদের জন্য নির্বাচনী প্রতীক সম্বলিত ব্যালট প্রস্তুত করে পাঠানো হবে, যা তারা নির্ধারিত নিয়মে কমিশনে পাঠিয়ে দিতে পারবেন। অতীতে পোস্টাল ব্যালট ব্যবস্থার সুযোগ থাকলেও সময় ও প্রক্রিয়াগত জটিলতার কারণে তা কার্যকর করা যায়নি। এবার নির্বাচন কমিশন আগেভাগেই প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। প্রবাসীদের জন্য একটি রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া চালু করা হবে, যা তফসিল ঘোষণার পূর্বেই শুরু হবে এবং আনুমানিক তিন সপ্তাহব্যাপী চলবে। 

দেশে অবস্থানরত সরকারি কর্মচারী, নির্বাচনের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং আইন হেফাজতে থাকা বন্দীদের জন্যও একই পদ্ধতিতে পোস্টাল ব্যালটে ভোট প্রদানের সুযোগ রাখা হবে। এদের জন্য অনলাইন রেজিস্ট্রেশন চালু করা হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যালট পেপার সরবরাহ করা হবে। 

নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘সভায় পোস্টাল ব্যালটভিত্তিক ‘আউট-অব-কান্ট্রি’ এবং ‘ইন-কান্ট্রি’ ভোটিং নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে।’ 

ভোট প্রক্রিয়াকে কার্যকর, সমন্বিত ও নির্বিঘ্ন করতে নির্বাচন কমিশন একটি অ্যাডহক ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে গঠিত এই কমিটিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অধিদপ্তরের প্রতিনিধি থাকবেন। 

সেপ্টেম্বর মাস থেকে প্রবাসী ভোটারদের জন্য ভোট সংক্রান্ত সচেতনতামূলক কর্মসূচি ও ভোটার শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা হবে। ধাপে ধাপে এই কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রবাসীদের মধ্যে ভোটের গুরুত্ব ও অংশগ্রহণ বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হবে। 

পোস্টাল ব্যালট প্রক্রিয়ার আর্থিক দিক তুলে ধরে আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ জানান, একটি মাত্র পোস্টাল ব্যালট পাঠাতে আনুমানিক ৫০০ টাকা খরচ হবে। ‘পূর্বে ডাক বিভাগ প্রতিটি ব্যালট পাঠানোর জন্য ৭০০ টাকা খরচের কথা বললেও পরবর্তীতে আলোচনার মাধ্যমে তা ৫০০ টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে। এটি শুধু ব্যালট পাঠানোর খরচ।’ 

তিনি আরও জানান, প্রিন্টিং ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য খরচও এই খাতে যুক্ত হবে। হিসাব অনুযায়ী, প্রতি এক লাখ ভোটারের জন্য প্রিন্টিং ও অন্যান্য খরচ ধরলে আনুমানিক ৬ থেকে ৭ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। 

সানাউল্লাহ বলেন, ‘আমরা যদি ধরে নেই প্রতিটি ভোটারের জন্য ৬০০ টাকা ব্যয় হয়, তাহলে এক লাখ প্রবাসী ভোটারের জন্য মোট খরচ দাঁড়াবে প্রায় ৬ থেকে ৭ কোটি টাকা। এ খরচ প্রিন্টিং, খাম, পরিবহন, ডাকসেবা ও অন্যান্য লজিস্টিক বাবদ বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।’ 

নির্বাচন কমিশন যথাসম্ভব ব্যয় সাশ্রয়ের দিকেও নজর রাখছে, যাতে স্বচ্ছতা বজায় রেখে এই প্রক্রিয়া কার্যকর করা যায়।

No comments found