বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি কলিমুল্লাহকে দুর্নীতির মামলায় কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। আদালতে তিনি দাবি করেন, শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালীন দীপু মনি অন্যায় আবদার করতেন—তা না মানায় তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হয়।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য (ভিসি) নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) দুপুরে তাকে গ্রেফতারের পর ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে হাজির করা হয়। শুনানির সময় কলিমুল্লাহ বিস্ফোরক অভিযোগ তুলে বলেন, “শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালীন দীপু মনি আমাকে অন্যায় আবদার করতেন। আমি তা না মানায় আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হয়েছে।”
বিকেল ৪টার দিকে দুদকের সাদা মাইক্রোবাসে করে তাকে আদালতে আনা হয় এবং সরাসরি কাঠগড়ায় তোলা হয়। দুদকের সহকারী পরিচালক মিনহাজ বিন ইসলাম তাকে কারাগারে পাঠানোর আবেদন করেন। ৪টা ১৬ মিনিটে বিচারক এজলাসে আসেন এবং ৪টা ২২ মিনিটে শুনানি শুরু হয়।
শুনানিতে কলিমুল্লাহ দাবি করেন, “আমি ১৭ থেকে ১৮ ঘণ্টা কাজ করতাম। টকশো করতাম রাতের বেলায়। দীপু মনির অন্যায় আবদার মেনে নিইনি বলেই আজ এসব অপবাদ শুনতে হচ্ছে।”
তাকে আদালতে জিজ্ঞাসা করা হয়, “আপনি কি ১৩৫২ দিনের মধ্যে ১১১৫ দিন ঢাকায় ছিলেন?” তিনি উত্তর দেন, “হ্যাঁ, তবে সে সময়েও আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ করেছি। আগের ভিসির রেখে যাওয়া কাজ চলমান রেখেছিলাম।”
বিচারক আরও জানতে চান, “আপনি কি ভিসি, বিভাগীয় প্রধান ও ডিন—সব দায়িত্ব একাই পালন করতেন?” জবাবে কলিমুল্লাহ বলেন, “আমি প্রথম না, আগের ভিসির ধারাবাহিকতায় দায়িত্বে ছিলাম। বিশেষ পরিস্থিতিতে এ সিদ্ধান্ত নিতে হয়।”
এ সময় তিনি আরও বলেন, “আমি চাকরি বাণিজ্য বন্ধ করেছি, সেকারণে আমার বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলক আচরণ করা হচ্ছে।”
তবে দুদকের আইনজীবী দেলোয়ার জাহান রুমি বলেন, “তিনি নিয়মিত টকশোতে অংশ নিতেন। একজন ভিসি প্রতিদিন এত ঘন্টা কাজ করেন—এ দাবি বিশ্বাসযোগ্য নয়।”
শুনানির একপর্যায়ে বিচারক বলেন, “আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হলে সব কিছু বেরিয়ে আসবে। আপনি জেলখানায় যাবেন, কবরে যেমন একা যেতে হয়, জেলখানায়ও তেমনি একা যেতে হবে।”
পরে ৪টা ৪২ মিনিটে তাকে আদালত থেকে হাজতখানায় পাঠানো হয়।
এর আগে সকালেই রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। ১৮ জুন দুদকের সহকারী পরিচালক মিনহাজ বিন ইসলাম বাদী হয়ে কলিমুল্লাহসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন:
-
সাবেক ভিসি ও প্রকল্প পরিচালক এ কে এম নূর-উন-নবী
-
সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম
-
ঠিকাদার মো. আ. সালাম বাচ্চু
-
এম এম হাবিবুর রহমান
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম করেন। অনুমোদিত ডিপিপি উপেক্ষা করে নকশা পরিবর্তন, চুক্তির অর্থ সীমার বাইরে কার্যাদেশ, নিরাপত্তা জামানত দিয়ে লোন সুবিধা, অগ্রিম বিল দেওয়ার মাধ্যমে সরকারি টাকা আত্মসাতসহ নানাবিধ দুর্নীতি করেছেন তারা।
এছাড়া তারা দ্বিতীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেন সরকারি বিধি না মেনে এবং দরপত্র মূল্যায়নেও বিধি লঙ্ঘন করেন।
দুদক বলছে, এসব কর্মকাণ্ডে সরকারের অন্তত ৪ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে দুর্নীতি বলেই গণ্য হয়।
আদালতের পর্যবেক্ষণে উঠে আসে, এসব কর্মকাণ্ড ‘ক্ষমতার অপব্যবহার ও অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গের’ শামিল। কলিমুল্লাহর বিরুদ্ধে তদন্ত চলবে, এবং অভিযোগ সত্য হলে তার বিরুদ্ধে আরও মামলা করা হতে পারে।