স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর > দিনাজপুরের রাজবাড়ী মন্দিরে এবারও আড়াইশ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী নৌ-বিহার উৎসবের মাধ্যমে রাধাকৃষ্ণের বিগ্রহ ফিরে এসেছে। শুক্রবার সকালে উলুধ্বনি এবং ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতায় ভক্তরা বিগ্রহকে বিদায় জানান। প্রথাগত এই উৎসবে পুনর্ভবা নদীর দুই তীরে এবং ৪৪টি ঘাটে পুণ্যার্থীদের ভিড় ছিল লক্ষণীয়। সকল ধর্মের মানুষের মিলন মেলা পরিণত হয় মন্দির এলাকা।
কাহারোল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোকলেদা খাতুন মীম জানান, অনুষ্ঠানটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। পুলিশের পাশাপাশি নিরাপত্তার দ্বায়িত্ব পালন করেছে সেনা, র্যাবসহ স্বেচ্ছাসেবীরা।
রাজ দেবোত্তর ট্রাস্টির এজেন্ট রনজিৎ কুমার সিংহ জানান, দিনাজপুরের রাজবংশের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল প্রায় সাড়ে পাঁচশ বছর আগে। রাজা প্রাণনাথ ১৭২২ সালে দিনাজপুর শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার উত্তরে কাহারোলের কান্তনগরে কান্তজিউ মন্দির নির্মাণ শুরু করেন এবং ১৭৫২ সালে তার পোষ্যপুত্র রাজা রামনাথ তা সম্পন্ন করেন। সেই থেকেই কান্তজিউ বিগ্রহ ৯ মাস কান্তনগর মন্দিরে এবং তিন মাস দিনাজপুর শহরের রাজবাড়ী মন্দিরে রাখা হত।
জন্মাষ্টমীর একদিন আগে রাধাকৃষ্ণের বিগ্রহ রাজবাড়ীতে ফিরিয়ে আনা হয়। অগ্রহায়ণ মাসের রাস পূর্ণিমার তিথীতে আবার সড়ক পথে পালকীতে করে কান্তজিউ মন্দিরে ফিরিয়ে আনা হয়। এ সময় মাস ব্যাপী রাসমেলা অনুষ্ঠিত হয় যেখানে স্থানীয় ও দূর দূরান্তের ভক্তরা অংশগ্রহণ করেন। মেলায় যাত্রাপালা, সার্কাস, পুতুলনাচসহ নানা বিনোদনের ব্যবস্থা থাকে।
এই ঐতিহ্যবাহী নৌ-বিহার উৎসব শুধু ধর্মীয় গাম্ভীর্য্যই নয়, বরং জাতিগত সম্প্রীতির প্রতীক হিসেবেও বিবেচিত। সব ধর্মের মানুষের অংশগ্রহণে দিনাজপুরের এই উৎসব বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে।