প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ অভিযোগ করেছেন, বিগত সরকার ডিজিটাইজেশনের আড়ালে কৌশলগত অবকাঠামোকে নির্দিষ্ট কিছু দেশি-বিদেশি কোম্পানির কাছে দীর্ঘমেয়াদে জিম্মি করেছে, যার ফলে দেশের স্বাধীন প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণ ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব অভিযোগ করেছেন, বিগত সরকার "ডিজিটালাইজেশন" এর আড়ালে দেশের গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অবকাঠামোকে দীর্ঘমেয়াদে কিছু নির্দিষ্ট দেশি ও বিদেশি কোম্পানির কাছে জিম্মি করে রেখেছে। এর ফলে দেশের প্রযুক্তি খাত ও নাগরিক সেবা প্রদানের সক্ষমতা মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়েছে।
শনিবার নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লিখেন, জনগণের কর ও ভ্যাটের টাকা কিংবা বিদেশি ঋণের অর্থ ব্যয় করে সরকার ও এর অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানগুলো যে সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার এবং অটোমেশন সিস্টেম কিনেছে, তা অধিকাংশই ভেন্ডর লকড, সফটওয়্যার লকড এবং হার্ডওয়্যার লকড। ফলে এসব সিস্টেম ২০২৮, ২০৩০ এমনকি ২০৩৪ সাল পর্যন্ত নির্দিষ্ট কোম্পানির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।
তিনি জানান, এই ধরনের ক্লোজড সিস্টেমে বিনিয়োগের ফলে শুধু সিস্টেম লাইসেন্স রিনিউ করতেই প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হচ্ছে। একটি ছোট কোড পরিবর্তন, প্রোফাইল সংশোধন কিংবা কনফিগারেশন পরিবর্তনের জন্য হাজার হাজার ডলার দিতে হচ্ছে। অনেক সময় বিদেশি কোম্পানির সাথে এমন একটি পরিবর্তন বোঝাতে গেলেও মাসের পর মাস লেগে যাচ্ছে।
ফয়েজ আহমেদ বলেন, একদিকে লাইসেন্স ফি, অন্যদিকে উচ্চ চেঞ্জ ফি ও আপগ্রেডেশন ফি মিলিয়ে সরকারি অর্থের অপচয় হচ্ছে ব্যাপক হারে। অথচ এইসব তথাকথিত অটোমেশন সিস্টেম দিয়ে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, এসব সিস্টেম থেকে মুক্তি পাওয়া সহজ নয়। কারণ, রয়েছে আইনি জটিলতা ও দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির বাধ্যবাধকতা। এই পরিস্থিতিকে তিনি "অদূরদর্শিতা ও ভয়ংকরতম রোগ" হিসেবে আখ্যা দেন।
তার মতে, দেশের ডিজিটাল ট্রান্সফর্মেশনের ভবিষ্যৎ কিছু কোম্পানির কাছে বন্ধক রাখা হলে, তা হবে এক মারাত্মক ভুল সিদ্ধান্ত। এজন্য এখনই মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে সম্মিলিতভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে।
তিনি সতর্ক করে বলেন, এখনই সময় ডিজিটালাইজেশনের নামে দেশকে প্রযুক্তিগতভাবে জিম্মি করে রাখার প্রবণতা থেকে সরে আসার। নইলে প্রযুক্তিগত স্বাধীনতা হারানোর পাশাপাশি, জাতীয় নিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়তে পারে।