close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

ধন্যবাদ সাংবাদিকতায় হারিয়ে যাচ্ছে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ!  

Jony King avatar   
Jony King
মুহাম্মদ মফিজুল ইসলাম ভুঁইয়া,ঢাকা।।

বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্রের মূলনীতির চতুর্থ স্তম্ব হচ্ছে গণমাধ্যম। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী এবং জনপ্রতিনিধিরা ঠিকমতো কাজ করছেন কি না,কোথায় কোথায় কি কি বিচ্যুতি,সেগুলো খুঁজে বের করে জনগণকে জানানোই সাংবাদিক আর গণমাধ্যমের দায়িত্ব বা কাজ। এক্ষেত্রে শুধু শুধু ধন্যবাদ দেওয়া সাংবাদিকের কাজ নয়। 

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যেভাবে গণহারে সামাজিক যোগাযোগ গণমাধ্যমে 'ধন্যবাদ' সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। গণমাধ্যমের কাছ থেকে জনগণ সেরকম ধন্যবাদ সাংবাদিকতা প্রত্যাশা করা ভূল। যারা করছে,তারা গণমাধ্যমে থাকছে না। বহুল প্রচারমাধ্যমে পরিণত হচ্ছে। গণমাধ্যম আর প্রচারমাধ্যম এক নয়। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে,
বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলোর মধ্যে কতটি সত্যিকারের গণমাধ্যম আর কতটি প্রচারমাধ্যম তার নির্মোহ বিস্তারিত বিশ্লেষণ হওয়া জরুরি।

দেশে 'ধন্যবাদ সাংবাদিকতা' বাড়ার এটিও একটি কারণ, যারা ধন্যবাদ সাংবাদিকতা করেন,তাদের ঝুঁকি তুলনামূলক কম এবং তারা নানা জায়গা থেকে বিবিধ সুবিধাও নিয়ে থাকেন। কিন্তু এর বাইরে যারা সত্যিকারের সাংবাদিকতা করেন বা করতে চান,তাদের বিপদ পায়ে পায়ে। তারা ভেতরে ভেতরে বিভিন্ন চাপে থাকেন। তাদেরকে চিহ্নিত করা হয় উন্নয়নবিরোধী বা সরকারবিরোধী সাংবাদিক হিসেবে। তারা অবজ্ঞা আর নির্যাতনেরও স্বীকার হচ্ছে। অনেকে লাঞ্ছিত বা চিহ্নিত হওয়ার ভয়েও চুপ থাকেন এবং 'ধন্যবাদ সাংবাদিকতা'শুরু করেন।

দুঃখজনক হলেও সত্য। ধন্যবাদ সাংবাদিকতা ও ধন্যবাদ সাংবাদিকের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। বিশেষ করে জেলা-উপজেলায় এমন সাংবাদিকের আধিক্য বেশি। এরা ডিসি,এসপি,
ইউএনও,এসি ল্যান্ড এমনকি পুলিশের কোনো এসআই কর্মস্থলে যোগ কিংবা বিদায় নিলেই ফেসবুকে অভিনন্দনের বন্যা বইয়ে দেয়। কোনো কোনো আন্ডার গ্রাউন্ড পত্রিকায় এসব কর্মকর্তার ছবি বড় করে দিয়ে তিন কলাম রিপোর্টও ছাপানো হয়।

অত্যন্ত আফসোস,কোথায় গিয়ে ঠেকেছে দেশের সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকতা? সরকারি কর্মকর্তা আসবেন,যাবেন-এটাই স্বাভাবিক। তারা তাদের কর্মস্থলে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করবেন। নিজের জীবনের সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করবেন। কিন্তু তিনি স্বাভাবিক কোনো কাজ করলেও বাহ্‌ বাহ্‌ রব ওঠে।ইদানীং ফেসবুকে পত্রিকার মতো রিপোর্ট আকারে চোখে পড়ে। সেখানে লেখা থাকে- জেলা বা উপজেলা প্রতিনিধি। এরপর শুরু হয় রিপোর্ট লেখা। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য এ যেন ফেসবুক সমেত এক পত্রিকা। যেখানে পত্রিকার মতো করে রিপোর্ট লিখছে।

এসব ধন্যবাদ সাংবাদিকতার ''তৈল সাংবাদিকরা "  আবার যাকে তেল দিয়ে রিপোর্ট লিখেছেন তার কাছে গিয়ে ফেসবুকের সে রিপোর্ট দেখান। তিনিও বুঝে কিংবা না বুঝে আনন্দে উত্তাল হয়ে যান। আর রিপোর্টে যে সব বিশেষণ ব্যবহার করা হয় তা সাংবাদিকতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। যেমন জনবান্ধব,কর্মঠ,মানবিক,জনদরদী,গরিবের বন্ধু,অপরাধীদের আতঙ্ক অমুক যোগ দিয়েছেন এ জেলা-উপজেলায়। 

আমরা জানি সবারই পরিবার আছে। দিন শেষে প্রত্যেককে তার পরিবারের কাছে ফিরতে হয়।পরিবারের সদস্যদের জন্য বাজার করতে হয়। মাস শেষে ঘরভাড়া দিতে হয়। সুতরাং স্রোতের বিপরীতে গিয়ে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার মধ্য দিয়ে পেশাদারিত্ব বিকাশের চেষ্টা করেও শেষমেশ কোনো লাভ হয় না।

কিছুদিন আগে ফেসবুকে এক সিনিয়র 
সাংবাদিককে প্রশ্ন করা হয়েছিল তার রিপোর্টে আগের মত ক্ষুরধার লেখনী আর অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পায় না কেন? জবাবে সেই সাংবাদিক বলেন ভাইরে 'ধন্যবাদ দিয়াই তো কুল পাই না,সাংবাদিকতা করব কখন?' 

এ বিষয়ে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম  বলেন,গত ১৬ বছরে গণমাধ্যমের ভূমিকা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক, ‘ওই সময় সাংবাদিক সংগঠনগুলো ব্যবসায়িক সিন্ডিকেট ও রাজনৈতিক গোষ্ঠীর সঙ্গে সমঝোতা করে পরিচালিত হয়েছে। এটি আমাদের জাতির জন্য দুর্ভাগ্য। তিনি বলেন,'গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে গণমাধ্যমে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা হবে। গণমাধ্যমকর্মীদের বেতন ও অন্যান্য সুবিধা যৌক্তিক পর্যায়ে বৃদ্ধি করতে সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।’ ‘সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হলে মালিক ও সম্পাদকদের প্রভাব থেকেও  সাংবাদিকদের মুক্ত করা প্রয়োজন।’

জাতির বিবেক গণমাধ্যম ধীরে ধীরে হারাচ্ছে তার নির্দিষ্ট গন্ডি। গণমাধ্যম গড়ে উঠেছে কৌতুহল আর সমালোচনার জুঁড়িতে। সময় এসেছে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন ও প্রচার প্রচারণার সুবর্ণ সুযোগ।

হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচারে  ধন্যবাদ সাংবাদিকতা সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে মুক্তগণমাধ্যমে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ ও প্রকৃত সংবাদকর্মীর বিকল্প নেই। তবেই রাষ্ট্র,সংবিধান ও জণগনের মূলনীতির প্রতিপালন ঘটবে।

লেখক: মুহাম্মদ মফিজুল ইসলাম ভুঁইয়া 
সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট 
মোবাইল: ০১৭১১-৩৩৯৪৮২

कोई टिप्पणी नहीं मिली