ঢাকা মহানগরীর বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার ব্যাপক উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান মঙ্গলবার আগারগাঁওয়ে পরিবেশ অধিদফতরে অনুষ্ঠিত একটি গুরুত্বপূর্ণ সভায় জানান, শিগগিরই ঢাকাকে ‘ডিগ্রেডেড এয়ারশেড’ হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে নগরীর বায়ুদূষণের উৎস এবং মাত্রা নিরূপণে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হবে, যারা বিজ্ঞানসম্মত সুপারিশ প্রদান করবে।
সৈয়দা রিজওয়ানা বলেন, ঢাকার পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে বায়ুদূষণের উৎস চিহ্নিত করে তা নিয়ন্ত্রণে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হবে। ইটভাটা বন্ধের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম, লক্ষীপুরের রামগতি সহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে কঠোরভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। এছাড়াও, মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহনের বিরুদ্ধে বিআরটিএ’র সহযোগিতায় অভিযান অব্যাহত থাকবে।
পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের তিনি নির্দেশনা দেন নির্মাণ সামগ্রী সঠিকভাবে সংরক্ষণ এবং পার্ক ও খোলা জায়গায় আগুন দেয়াসহ পাতা পোড়ানোর মতো কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে।
ঢাকার ‘জিরো সয়েল’ কর্মসূচি বাস্তবায়নে তিনি জনগণ ও কমিউনিটিকে সম্পৃক্ত করার গুরুত্বে জোর দেন। শহরের প্রতিটি জায়গায় গাছ লাগানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, পতিত জমি থাকবে না। পাতা পোড়ানোর হটস্পট চিহ্নিত করে সচেতনতামূলক কাজ করা হবে। এ জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং গণমাধ্যমে প্রচার চালানো হবে।
উপদেষ্টা আমিন বাজার এলাকায় বালু অবৈধভাবে রাখার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেন এবং গাছ লাগানোর কাজে স্বেচ্ছাসেবীদের সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানান।
সভায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ, অতিরিক্ত সচিব ড. ফাহমিদা খানম, পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মো. কামরুজ্জামান, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা শহর দীর্ঘদিন ধরেই বায়ুদূষণের তীব্র সমস্যায় আক্রান্ত। যানজট, ইটভাটা, নির্মাণ কার্যক্রম এবং অব্যবস্থাপনার কারণে বাতাসের মান ক্রমশ নিম্নমুখী। বায়ুদূষণের কারণে ফুসফুসজনিত রোগ, অ্যালার্জি ও হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। শিশু, বৃদ্ধ এবং অসুস্থ ব্যক্তিদের জন্য এর প্রভাব অত্যন্ত বিপজ্জনক।
এই সমস্যার মোকাবিলায় ‘ডিগ্রেডেড এয়ারশেড’ ঘোষণা এবং বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন একটি নতুন দিক নির্দেশনা হিসেবে গণ্য হচ্ছে। কমিটি বায়ুদূষণের উৎস সনাক্তকরণ থেকে শুরু করে নির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ পর্যন্ত তত্ত্বাবধান করবে।
এছাড়াও, ইটভাটাগুলোতে নিয়মিত নজরদারি ও পরিচালনা নিষেধাজ্ঞার ফলে বায়ুদূষণের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কমবে বলে আশা করা হচ্ছে। মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন যাত্রা বন্ধ করলে যানবাহন থেকে নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়ার মাত্রাও কমে আসবে।
পরিবেশ অধিদপ্তর ইতিমধ্যেই পাতা পোড়ানো বন্ধ, নির্মাণ সামগ্রী সঠিকভাবে সংরক্ষণ এবং বায়ুদূষণ রোধে বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা শুরু করেছে। এই কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় আরও কঠোর আইন প্রয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যমের মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করার উদ্যোগ নেয়া হবে। বায়ুদূষণ রোধে সবাইকে একত্রিত করে ‘জিরো সয়েল’ কর্মসূচির আওতায় নতুন করে গাছ লাগানোর প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা হবে।
এমন পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন হলে ঢাকার বাতাসের মান উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হবে এবং শহরের বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে।
পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান নগরবাসীর কাছে আহ্বান জানিয়েছেন, পরিবেশ রক্ষা এবং বায়ুদূষণ কমানোর লক্ষ্যে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতন ও দায়িত্বশীল হওয়ার জন্য। বালু রাখাসহ বিভিন্ন অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করা এবং গাছ লাগানোর কাজে অংশ নেওয়া সকলের কর্তব্য।
শহরের পরিবেশ উন্নয়নে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ না করলে বায়ুদূষণের বিরুদ্ধে সরকারী প্রচেষ্টা যথেষ্ট সফল হবে না, তাই নাগরিক সচেতনতা প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ঢাকার বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে ‘ডিগ্রেডেড এয়ারশেড’ ঘোষণা ও বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন একটি সময়োপযোগী এবং প্রাসঙ্গিক পদক্ষেপ। এটি শুধু পরিবেশবান্ধব নয়, বরং জনস্বাস্থ্য রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ। এই উদ্যোগ সফল হলে বাংলাদেশের রাজধানী শহরটি ভবিষ্যতে আরও বাসযোগ্য ও স্বাস্থ্যকর হয়ে উঠবে। তবে এর সফলতার জন্য প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ এবং নাগরিকদের সহযোগিতা।
এখন সময় এসেছে সবাই মিলে বায়ুদূষণ কমানোর লক্ষ্যে কঠোর ও ধারাবাহিক পদক্ষেপ গ্রহণের। পরিবেশ রক্ষা আমাদের সবার দায়িত্ব।