ঢাকার বাইরে হাইকোর্ট বেঞ্চ স্থাপনের সিদ্ধান্তে উত্তাল সুপ্রিম কোর্ট..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
Lawyers staged a strong protest at the Supreme Court against the decision to set up High Court benches outside Dhaka, calling it unconstitutional and a threat to judicial consistency.

ঢাকার বাইরে হাইকোর্ট বেঞ্চ স্থাপনের উদ্যোগকে ‘সংবিধানবিরোধী’ আখ্যা দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন আইনজীবীরা। তাদের দাবি, এতে ন্যায়বিচারের পথ আরও জটিল হবে।

 

ঢাকার বাইরে বিভাগীয় শহরগুলোতে হাইকোর্ট বেঞ্চ স্থাপনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত প্রাঙ্গণ। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এ সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে সোমবার (৭ জুলাই) সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে সাধারণ আইনজীবীদের ব্যানারে অনুষ্ঠিত হয় এক বিক্ষোভ-সমাবেশ, যেখানে শতাধিক আইনজীবী একত্রিত হয়ে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

দুপুরে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভ মিছিলটি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান ফটক থেকে শুরু হয়ে পুরো আদালত প্রাঙ্গণ প্রদক্ষিণ করে। এরপর আইনজীবী সমিতির ভবনের সামনে এসে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বক্তারা বলেন, দেশের বিচারব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দু হলো রাজধানী ঢাকা। কিন্তু এখন ঢাকার বাইরে স্থায়ীভাবে হাইকোর্ট বেঞ্চ স্থাপনের যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, তা সংবিধান এবং সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের পূর্ববর্তী রায়কে অগ্রাহ্য করে গ্রহণ করা হচ্ছে।

বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহফুজুর রহমান মিলন বলেন, আমরা কোনো রাজনৈতিক বা ব্যক্তিকেন্দ্রিক ইস্যুতে নয়, বিচারব্যবস্থার ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কিত হয়ে এই অবস্থান নিয়েছি। এই সিদ্ধান্ত দেশের আইন ও সংবিধানের পরিপন্থী। আমরা চাই, অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হোক।

আইনজীবী শেখ আতিয়ার রহমান বলেন, বিভাগীয় শহরে আলাদা বেঞ্চ হলে ন্যায়বিচার হবে বিভ্রান্তিকর। বিচারপ্রার্থীরা বিভ্রান্ত হবে, ন্যায়বিচারের গতিপথ ব্যাহত হবে। একই আইনে একেক জায়গায় ভিন্ন ব্যাখ্যা আসবে, যা আদালতের একতা নষ্ট করবে।

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন আইনজীবী মাহবুবুর রহমান খান, মাকসুদ উল্লাহ, ব্যারিস্টার মোকছেদুল ইসলাম, নাসের খান, আশরাফুল ইসলাম, আব্দুল কুদ্দুছ বাদল, মো. রেজাউল করিম, মো. আল আমিন ও জুয়েল মুন্সি। সকলেই একবাক্যে বলেন, ‘ঢাকার বাইরে স্থায়ীভাবে হাইকোর্ট বেঞ্চ হলে বিচারব্যবস্থার নিরপেক্ষতা ও স্বাধীনতা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।

এই আন্দোলনের মধ্যে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে। হাইকোর্ট ডিভিশনের বেঞ্চ বিভাগীয় শহরে স্থানান্তরের উদ্যোগ বন্ধ করতে প্রধান বিচারপতির কাছে লিখিত আবেদন করেছেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী সাইফুল ইসলাম। আবেদনটি সোমবার হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রারের (বিচার) কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়। এতে সাইফুল ইসলাম ৫টি যুক্তি তুলে ধরেন, কেন এই সিদ্ধান্ত সংবিধান ও বিচারব্যবস্থার জন্য হুমকিস্বরূপ।

১. সংবিধানবিরোধী উদ্যোগ: তিনি উল্লেখ করেন, সংবিধানের ১০০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান আসন ঢাকাতেই থাকবে। যদিও হাইকোর্ট সেশন অন্যত্র বসতে পারে, তা হবে কেবল অস্থায়ী ভিত্তিতে। স্থায়ীভাবে স্থানান্তর সাংবিধানিক পরিপন্থি।

২. আইনের বিভ্রান্তি: বিভিন্ন স্থানে পৃথক বেঞ্চ স্থাপনে একক আইনের বিভিন্ন ব্যাখ্যা তৈরি হতে পারে, যা সর্বোচ্চ আদালতের ঐক্য ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে।

৩. অতিরিক্ত ব্যয় ও জটিলতা: বিভাগীয় শহরে বিচারপতি, আদালত ভবন, নিরাপত্তা ও সহায়ক কর্মী নিয়োগ সবই ব্যয়সাপেক্ষ ও প্রশাসনিকভাবে জটিল। এতে রাষ্ট্রের অর্থ ও দক্ষতা অপচয় হবে।

৪. বিচারিক চাপ ও পক্ষপাতের শঙ্কা: স্থানীয় প্রভাব ও রাজনৈতিক চাপ বিচারকার্যে হস্তক্ষেপ করতে পারে। এতে হাইকোর্টের নিরপেক্ষতা হ্রাস পাবে।

৫. ঢাকার বিচার জট আরও বাড়বে: বর্তমানে হাইকোর্টে সবচেয়ে বেশি মামলা হয় ঢাকাতেই। বিচারপতিদের বাইরে পাঠালে ঢাকায় বিচারক সংকট তৈরি হবে, ফলে মামলার জট আরও দীর্ঘ হবে।

আইনজীবী সাইফুল ইসলাম তার আবেদনে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টি বিচারপতিদের সুদৃষ্টি কামনা করে বলেন, “বিচারপ্রার্থীদের স্বার্থে এই উদ্যোগ যেন স্থগিত থাকে এবং ঢাকাকেন্দ্রিক বিচারব্যবস্থার কেন্দ্রীয়তা অক্ষুণ্ণ রাখা হয়।”

সবশেষে আইনজীবীরা ঘোষণা দেন, দাবি না মানা পর্যন্ত তারা ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন এবং প্রয়োজনে বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।

कोई टिप्पणी नहीं मिली