সরকার হঠাৎ সিদ্ধান্তে ঢাকা সেনানিবাসের ‘এম ই এস’ এলাকার একটি ভবনকে অস্থায়ী কারাগার ঘোষণা করেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলার প্রেক্ষিতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
ঢাকা সেনানিবাসের ভেতরে অবস্থিত একটি ভবনকে অস্থায়ী কারাগার হিসেবে ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ সরকার। বিষয়টি জানিয়ে একটি সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কারা-১ শাখা। প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জানানো হয়, ফৌজদারী কার্যবিধি এবং প্রিজনস অ্যাক্ট ১৮৯৪ অনুযায়ী সরকারের প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, ঢাকা সেনানিবাসের বাশার রোডের উত্তর পাশে অবস্থিত ‘এম ই এস’ এর ৫৪ নম্বর ভবনকে অস্থায়ীভাবে কারাগার ঘোষণা করা হলো। এই ঘোষণা অবিলম্বে কার্যকর হবে এবং তা যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে কার্যকর করা হচ্ছে।
প্রজ্ঞাপনটিতে স্বাক্ষর করেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. হাফিজ-আল-আসাদ। এতে তারিখ হিসেবে ১২ অক্টোবর উল্লেখ করা হয়েছে, যা নির্দেশ করে যে সিদ্ধান্তটি খুব সম্প্রতি নেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তিনটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে মোট ২৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। তাঁদের মধ্যে ১৫ জন এখনো সেনাবাহিনীতে সক্রিয় দায়িত্বে আছেন, এবং একজন কর্মকর্তা অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে (এলপিআর) রয়েছেন। মোট ১৬ জন সেনা সদস্যের মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ ছাড়া বাকি সবাই বর্তমানে সেনা হেফাজতে রয়েছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সিদ্ধান্ত সেনানিবাসের ভেতরে প্রশাসনিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। অনেকেই মনে করছেন, সেনা সদস্যদের বিষয়ে চলমান তদন্তের কারণে নিরাপত্তার স্বার্থে এই ভবনকে অস্থায়ী কারাগার হিসেবে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে এখনো এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি, তবে প্রশাসনিক মহলে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি সরকারের একটি কৌশলগত পদক্ষেপ হতে পারে, যেখানে নিরাপত্তা ও বিচার প্রক্রিয়ার সমন্বয় নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে। সেনানিবাসের অভ্যন্তরে এমন ধরনের কারাগার ঘোষণা বিরল হলেও দেশের ইতিহাসে এটি গুরুত্বপূর্ণ নজির হিসেবে থেকে যাবে।
জনমনে এই খবর ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। অনেকেই জানতে চাচ্ছেন, কেন এই সিদ্ধান্ত এত দ্রুত কার্যকর করা হলো এবং কারাগারটি কতদিন পর্যন্ত অস্থায়ী থাকবে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, “এই অস্থায়ী কারাগার থাকবে যতদিন পর্যন্ত তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া নিরাপদভাবে সম্পন্ন না হয়।”
বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, সরকার অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যেই আইনগত প্রক্রিয়া এগিয়ে নিচ্ছে। ঢাকার সেনানিবাসের ‘এম ই এস’ ভবনকে অস্থায়ী কারাগার হিসেবে ঘোষণার এই পদক্ষেপ সেই ধারাবাহিকতারই একটি নতুন অধ্যায়।