ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে শুক্রবার গভীর রাতে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করেছে। হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল থেকে শুরু হওয়া এ মিছিল ক্যাম্পাসজুড়ে ঘুরে বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে উত্তাল হয়ে ওঠে।
শুক্রবার (৮ আগস্ট) রাত প্রায় ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল প্রাঙ্গণ থেকে কয়েক ডজন শিক্ষার্থী একত্রিত হয়ে একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে। তাদের মূল দাবি ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে চলমান ছাত্ররাজনীতির কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা।
মিছিলটি মুহসীন হল থেকে শুরু হয়ে টিএসসি এলাকা হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পথে পথে বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা এতে যোগ দেন, ফলে মিছিলের আকার ক্রমশ বড় হতে থাকে। আন্দোলনকারীরা একযোগে স্লোগান দিতে থাকেন— “ওয়ান টু থ্রি ফোর, হল পলিটিক্স নো মোর” এবং “হলে হলে রাজনীতি, চলবে না চলবে না”। এসব স্লোগান রাতের নির্জনতাকে ভেঙে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় এক ভিন্ন আবহ তৈরি করে।
অংশগ্রহণকারীরা জানান, বহু বছর ধরে আবাসিক হলগুলোতে ছাত্ররাজনীতির নামে দখলদারি, সহিংসতা, ও শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়ে আসছে। এর ফলে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী ভয়ে বা অসুবিধার কারণে হল ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, হলগুলোতে সিট বণ্টন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও রাজনৈতিক পরিচয় বড় ভূমিকা রাখে, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্য তৈরি করছে।
মিছিলে অংশ নেওয়া কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় হলো শিক্ষার জায়গা, রাজনীতির নয়। এখানে রাজনৈতিক সংঘর্ষ বা প্রভাব বিস্তারের পরিবর্তে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ পরিবেশে পড়াশোনার সুযোগ দিতে হবে। তারা আরও দাবি করেন, কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে আবাসিক হলগুলোতে ছাত্ররাজনীতির সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা।
এদিকে, রাতের এই মিছিলের খবরে অনেক সাধারণ শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমর্থন জানাচ্ছেন। তাদের মতে, যদি হলগুলোতে রাজনীতি বন্ধ হয়, তবে শিক্ষার্থীরা আরও স্বস্তি ও নিরাপত্তা অনুভব করবে। কেউ কেউ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অনুরোধ করেছেন, শিক্ষার্থীদের এই দাবি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করার জন্য।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই মিছিল বা দাবির বিষয়ে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন। প্রয়োজন হলে আরও বড় আকারের বিক্ষোভের আয়োজন করা হবে।