নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২৪ ও ২৫ নং ওয়ার্ডের ঘনবসতিপূর্ণ দেউলী চৌরাপাড়া এলাকায় রেলের কর্ডলাইন নির্মাণের সম্ভাব্য পরিকল্পনার বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে স্থানীয় জনগণ। শুক্রবার সকালে এলাকার শত শত মানুষ একত্রিত হয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে তাদের দাবি জানায়— কর্ডলাইন যেন এই ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় না নির্মিত হয়, বরং মহাসড়ক ঘেঁষে বা কোনো ফাঁকা জায়গা দিয়ে এর রুট নির্ধারণ করা হয়।
প্রতিবাদী এই কর্মসূচির আয়োজন করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন বন্দর নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক কবির সোহেল, অ্যাডভোকেট নূর মোহাম্মদ, সাংবাদিক আতাউর রহমান, সাংবাদিক আবদুল লতিফ রানা, জহিরুল ইসলাম শাওন, মোহাম্মদ হোসেন, নূরে আলম ও আল হাসান।
বক্তারা একে একে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, চৌরাপাড়া এলাকায় রয়েছে হাজার হাজার ঘরবাড়ি, কলকারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। যেকোনো রেললাইন নির্মাণ এই স্থাপনার উপর দিয়ে গেলে তা এক বিপর্যয়ের নামান্তর হবে। এটি শুধু ঘরবাড়ি ধ্বংস করবে না, শত শত পরিবারের জীবন-জীবিকাকে চরম হুমকির মুখে ফেলবে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, এ অঞ্চলটি শত বছরের পুরোনো বসতি, যেখানে মানুষ প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বসবাস করে আসছে। এখানে বাপ-দাদার ভিটেমাটি তারা কিছুতেই ছাড়তে রাজি নন। রেল কর্ডলাইন নির্মাণের জন্য বিকল্প অনেক জায়গা রয়েছে, তাই সরকার ও রেল বিভাগকে মানুষের জীবিকা, বসতভিটা এবং সামাজিক স্থিতিশীলতা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানান তারা।
বিশেষভাবে তারা উল্লেখ করেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে ফাঁকা জায়গা রয়েছে, যা এই প্রকল্পের জন্য যথোপযুক্ত হতে পারে। এতে করে স্থানীয় বাসিন্দাদের বাস্তুচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না, এবং প্রকল্পটিও নির্বিঘ্নে বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।
জানা যায়, রেল বিভাগ নারায়ণগঞ্জ থেকে কুমিল্লার লাকসাম পর্যন্ত স্থগিতকৃত রেলের কর্ডলাইন পুনরায় নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এজন্য ৪টি সম্ভাব্য রুট নির্ধারণ করে ফিজিবিলিটি স্টাডি ও সার্ভে চালানো হচ্ছে। বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২৪ ও ২৫ নং ওয়ার্ড এলাকায় প্রাথমিক সার্ভে চলছে, যা স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে, প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে যেন কোনোভাবেই তাদের আবাসভূমি কেড়ে না নেওয়া হয়। রেলের উন্নয়ন তারা চায়, তবে সেটি যেন মানুষের ক্ষতি করে না হয়— এমনটাই তাদের অনুরোধ।
এমন পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি, জনগণের জীবন-জীবিকা এবং নিরাপত্তা বিবেচনায় রেখে দ্রুত বিকল্প রুট নির্ধারণ করা হোক, যাতে রেলের উন্নয়ন আর মানুষের অধিকার— উভয়ই রক্ষা পায়।