ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর সরানোর ঘটনায় সাবেক এমপি গোলাম মাওলা রানি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বিদ্রুপ করে তিনি বলেন, এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশ একদিন মরুভূমিতে পরিণত হবে।
ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর এলাকা থেকে অবৈধভাবে পাথর সরিয়ে নেওয়ার ঘটনা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রানি। বুধবার বিকেলে নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক বিদ্রুপপূর্ণ পোস্টে তিনি এই ঘটনার সমালোচনা করেন এবং এর পরিণতি নিয়ে কড়া সতর্কতা দেন।
তার পোস্টে গোলাম মাওলা রানি লেখেন, “ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর এলাকাটি দীর্ঘদিন ধরে অপরিকল্পিতভাবে পাথরের স্তূপে ভরা ছিল। কিন্তু দেশপ্রেমিক লোকজন অনেক কষ্ট করে, মনের আনন্দে ও নিজ দায়িত্বে সেই পাথরগুলো সরিয়ে নিয়েছে! এখন পুরো এলাকা বালিতে চিকচিক করছে।”
তিনি বিদ্রুপ করে আরও লিখেছেন, “নদীর প্রবাহপথে যে পাথরগুলো প্রাকৃতিকভাবে ছিল, সেগুলোও এই দেশপ্রেমিকরা সরিয়ে নিয়েছে! এর ফলে নদীর নাব্যতা বেড়ে গেছে। এখন থেকে ভারত থেকে বিনা বাধায় আরও বেশি মাছ, পানি এবং পাথর আসা শুরু করেছে।”
গোলাম মাওলা রানি মন্তব্য করেন, “ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর অধ্যুষিত এলাকায় যেভাবে ‘রিসেট বাটন’ চাপা হয়েছে, যদি সারা দেশের নদ-নদী, পাহাড় ও সমুদ্র অঞ্চলে দেশপ্রেমিক জনতা একইভাবে কার্যক্রম চালায়, তবে খুব শিগগিরই বাংলাদেশ আরবের মরু অঞ্চলে পরিণত হবে।”
তিনি মজা করে ভবিষ্যতের চিত্রও তুলে ধরেন, “সেই মরুভূমির নিচে তেল থাকবে। মরুভূমিতে হাজার হাজার উট, দুম্বা আর ভেড়া ঘুরে বেড়াবে। স্থানীয় মানুষরা তখন আরব দেশের কফিল হয়ে যাবে, আর ভারত থেকে শ্রমিক এনে স্যান্ডার খামার তৈরি করবে।”
স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের মতে, ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর এলাকা শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যই নয়, বরং পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। এখান থেকে অবৈধভাবে পাথর সরানো হলে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ এবং ইকোসিস্টেম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তারা মনে করেন, প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় প্রশাসনের আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
ভোলাগঞ্জ, যা সিলেটের অন্যতম পর্যটন স্পট হিসেবে পরিচিত, বছরের পর বছর ধরে পাথর উত্তোলনকারীদের দখলে পড়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য হারাচ্ছে। পরিবেশবাদীরা বহুদিন ধরে এই এলাকায় অবৈধ পাথর উত্তোলন বন্ধে আহ্বান জানিয়ে আসছেন। তবুও অনিয়ম ও প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় এ কার্যক্রম চলছেই।
গোলাম মাওলা রানির এই বিদ্রুপপূর্ণ পোস্টটি সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই তার বক্তব্যের সঙ্গে একমত প্রকাশ করেছেন এবং দাবি তুলেছেন—পাথর উত্তোলন বন্ধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হোক। অন্যদিকে কিছু মানুষ মনে করছেন, এই ধরনের পোস্ট রাজনৈতিক বিদ্রুপের চেয়ে বরং বাস্তব সমাধান প্রস্তাবের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংস হলে এর প্রভাব শুধু ভোলাগঞ্জেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং দেশের সামগ্রিক পরিবেশব্যবস্থা ও অর্থনীতিতে বড় ধরনের বিপর্যয় ডেকে আনবে। এ জন্য এখনই কার্যকর আইন প্রয়োগ ও সচেতনতা বাড়ানো জরুরি বলে তারা মনে করছেন।