ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, দেশের ৭১% মানুষ পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায়। তিনি সতর্ক করেন, সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে আবারও ফ্যাসিবাদ জন্ম নেবে।
রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোড়ন সৃষ্টিকারী মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তিনি বলেন, দেশের ৭১ শতাংশ মানুষ পিআর (Proportional Representation) পদ্ধতিতে নির্বাচন চায়। এটি বাস্তবায়ন না হলে এবং জুলাই জাতীয় সনদ কার্যকর না করা হলে বিপ্লব অপূর্ণ থেকে যাবে।
ডা. তাহের স্পষ্টভাবে সতর্ক করে বলেন, “সংস্কারবিহীন নির্বাচন মানেই আবারও ফ্যাসিবাদের জন্ম। যারা সংস্কার ছাড়া নির্বাচন চায়, তারা মূলত আওয়ামী আমলের মতো স্বৈরাচার ফিরিয়ে আনতে চায়।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, “জুলাই বিপ্লবের পর জনগণ যাদের ক্ষমতায় বসিয়েছে, তারাও আজ ফ্যাসিবাদের সঙ্গে আপস করছে। এই বাস্তবতায় অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে হলে পিআর পদ্ধতি চালু করতেই হবে।”
রোববার (২৪ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের মানিক মিয়া হলে ‘বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশন’ আয়োজিত ‘পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন ও জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ এর আইনি ভিত্তি’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ বক্তব্য রাখেন।
সভায় দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, আইনজ্ঞ, রাজনীতিবিদ ও আন্দোলনকর্মীরা অংশ নেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সিনেট সদস্য এবং বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশনের জেনারেল সেক্রেটারি অধ্যাপক এবিএম ফজলুল করীম বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে বলেন, “জুলাইয়ে ছাত্র-শিক্ষক ও জনতার গণঅভ্যুত্থান ছিল এক অনন্য মাইলফলক। এর রাজনৈতিক ফসল হলো জুলাই জাতীয় সনদ ও ঘোষণাপত্র। কিন্তু তা এখনো আইনগত ভিত্তি পায়নি। যদি এটিকে আইনি কাঠামো দেওয়া না হয়, তবে বিপ্লবের সব অর্জন কাগজেই সীমাবদ্ধ থাকবে।”
এসময় গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি নূরুল হক নূর বলেন, “এই গণঅভ্যুত্থানের অর্জনকে সংবিধানিক স্বীকৃতি না দিলে ভবিষ্যতে স্বৈরশাসনের পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। জনগণের স্বার্থে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে পিআর ভিত্তিক নির্বাচন নিশ্চিত করা এখন জরুরি।”
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. এম কোরবান আলী বলেন, “পিআর পদ্ধতি শুধু একটি নির্বাচন পদ্ধতি নয়, এটি একটি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির সূচনা। আমাদের দেশের রাজনৈতিক কাঠামো ও প্রশাসনিক দুর্বলতা দূর করতে হলে এ সংস্কার সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে।”
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন অধ্যক্ষ মো. সিরাজুল ইসলাম, জিএম আলাউদ্দিন, অধ্যক্ষ ড. মো. সাখাওয়াত হোসাইন, অধ্যাপক নূর নবী মানিক, প্রফেসর ড. আবুল কালাম পাটোয়ারী, প্রফেসর ড. উমার আলী, ড. নজরুল ইসলাম, ব্যারিস্টার বেলায়াত হোসাইন, মানবাধিকার নেতা ড. গোলাম রহমান ভূঁইয়া, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. আব্দুল লতিফ মাসুম, অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ এবং অন্যান্য শিক্ষা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।
সবার বক্তব্যে একই বিষয় উঠে আসে— বাংলাদেশে সুষ্ঠু গণতন্ত্র ও জনগণের প্রকৃত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হলে অবিলম্বে পিআর পদ্ধতি চালু করতে হবে এবং জুলাই জাতীয় সনদকে আইনি স্বীকৃতি দিতে হবে।