চরমোনাই পীর সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেছেন, প্রচলিত ভোট ব্যবস্থা দেশকে ধ্বংস করছে। কালো টাকা, পেশিশক্তি ও ভোট জালিয়াতি রোধ করতে দেশ বাঁচাতে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন অপরিহার্য।
ইসলামী আন্দোলনের আমির চরমোনাই পীর সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের ৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ছাত্র সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দেশের বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংসাত্মক আখ্যা দেন। তিনি বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীরা জীবন দিয়েছে একটি সুন্দর ও সুষ্ঠু দেশ গড়ার আশায়। কিন্তু প্রচলিত নির্বাচন ব্যবস্থা কালো টাকা, পেশিশক্তি ও ভোট জালিয়াতির সুযোগ করে দেয়। এ ব্যবস্থার ফলে দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার হয়, চাঁদাবাজির জন্ম হয় এবং জনগণের আস্থা নষ্ট হয়। তাই দেশকে রক্ষা করতে হলে অবশ্যই ভোটের অনুপাতভিত্তিক পদ্ধতি—পিআর নির্বাচন—প্রবর্তন করতে হবে।”
চরমোনাই পীর আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার যদি সত্যিই গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, তবে গণভোটের মাধ্যমে জনগণের মতামত জেনে দেখা উচিত, তারা কি পিআর পদ্ধতিকে সমর্থন করে কিনা। তার মতে, নির্বাচন ব্যবস্থার মৌলিক সংস্কার ছাড়া জনগণের মুক্তি নেই এবং জুলাই আন্দোলনে যারা প্রাণ দিয়েছে তাদের আত্মত্যাগ বৃথা যাবে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “গণহত্যার বিচার দৃশ্যমান না হলে জাতির বিবেক কখনো শান্ত হবে না।”
সমাবেশ থেকে একটি সাত দফা ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়। এর মধ্যে ছিল—
-
শিক্ষাব্যবস্থার মৌলিক সংস্কার,
-
পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন বাস্তবায়ন,
-
জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের আইনগত স্বীকৃতি,
-
নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন,
-
জুলাই গণহত্যার বিচার,
-
চাঁদাবাজি বন্ধ,
-
এবং শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ ও স্বচ্ছ পরিবেশ নিশ্চিত করা।
সমাবেশের সভাপতিত্ব করেন ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি ইউসুফ আহমদ মানসুর। বক্তব্যে চরমোনাই পীর নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কারের পাশাপাশি দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়েও স্পষ্ট দিকনির্দেশনা দেন। তিনি বলেন, “দেশে যদি সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হয়, তবে প্রচলিত নির্বাচনী সংস্কৃতি ভাঙতে হবে।”
অন্যদিকে, ইসলামী আন্দোলনের নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম (শায়খে চরমোনাই) বলেন, তারেক রহমান ও সজীব ওয়াজেদ জয়ের মৌলবাদ বিষয়ক বক্তব্যে কোনো পার্থক্য নেই। তিনি অভিযোগ করেন, মৌলবাদ নিয়ে যারা আজ সমালোচনা করেন, তারাই একসময় ডানপন্থীদের ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “৯২ শতাংশ মুসলমানের দেশে ইসলাম বিজয়ী হবেই। যারা মৌলবাদকে ভয় দেখায়, তারা আসলে ইসলাম বিদ্বেষী।”
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ মাদানী, মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। বক্তারা একযোগে দাবি করেন, দেশে পিআর পদ্ধতির নির্বাচন চালু হলে জনগণের ভোটের মূল্য রক্ষা পাবে এবং গণতন্ত্র হবে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়ানো।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, চরমোনাই পীরের এই বক্তব্য শুধু ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের জন্য নয়, বরং দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক সংস্কারের দাবির সাথেও মিলে যায়। জুলাই অভ্যুত্থানের পর পরিবর্তনের যে স্রোত শুরু হয়েছে, তা সঠিক সংস্কার ছাড়া থেমে গেলে আবারও জনগণের হতাশা বাড়তে পারে।