দেশজুড়ে আবারও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে ডেঙ্গু। মাত্র একদিনেই মৃত্যু হয়েছে তিনজনের, আর নতুন করে ভর্তি হয়েছেন ৪৯২ জন রোগী।
বাংলাদেশে আবারও ভয়াবহ রূপ নিতে শুরু করেছে ডেঙ্গু। সারাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে নতুন করে ৪৯২ জন রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
এই তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুম। সোমবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৮ জনে।
ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে অঞ্চলভেদে সংখ্যাটি বেশ উদ্বেগজনক। সর্বাধিক রোগী ভর্তি হয়েছেন বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) — সংখ্যা ১৫৪। এরপর রয়েছে ঢাকা বিভাগ (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬৯ জন, চট্টগ্রাম বিভাগ (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫১ জন, খুলনা বিভাগে ৫৪ জন এবং ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে যথাক্রমে ৩৬ এবং ৫৩ জন।
ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ জন, রংপুর বিভাগে ৩ জন এবং সিলেট বিভাগে ১ জন নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
তবে আশার খবরও আছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪১১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। আর চলতি বছর এখন পর্যন্ত মোট ১১,৪০৯ জন রোগী ডেঙ্গু জ্বর থেকে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০২৫ সালের ৭ জুলাই পর্যন্ত দেশে মোট ১২,৭৬৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে ৫২ দশমিক দুই শতাংশ পুরুষ এবং ৪০ দশমিক আট শতাংশ নারী।
এই পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট যে ডেঙ্গু এখন আর শুধু বর্ষাকালীন একটি স্বাস্থ্যঝুঁকি নয়, বরং এটি জাতীয় পর্যায়ে একটি ক্রমাগত বাড়তে থাকা স্বাস্থ্যসঙ্কট। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আবহাওয়ার পরিবর্তন, পানি জমে থাকা, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ এবং সচেতনতার অভাব এর পেছনে মূল কারণ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, নিয়মিতভাবে বাড়ির আশেপাশে জমে থাকা পানি পরিষ্কার রাখতে, ফুলের টব ও টায়ারে পানি জমে থাকলে তা ফেলে দিতে এবং মশারি ব্যবহার করতে। বিশেষ করে সকাল ও সন্ধ্যার সময় মশা কামড়ানোর আশঙ্কা বেশি থাকে, তাই এ সময় বাড়তি সতর্কতা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সরকারি পর্যায়ে হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু ইউনিট চালু রাখা হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম মজুত রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে পরিস্থিতি মোকাবিলায় নাগরিকদের সক্রিয় অংশগ্রহণই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, বয়স্ক ও শিশুদের ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে তা জটিল আকার ধারণ করতে পারে। তাই কোনো উপসর্গ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
একইসঙ্গে সরকারকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে শহর ও গ্রামীণ এলাকায় সচেতনতামূলক প্রচারণা বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা।