ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নারী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত টার্গেটিং ও অনলাইন প্রোপাগান্ডার বিরুদ্ধে সতর্কবার্তা দিয়েছেন ভিপি প্রার্থী সাদিক কায়েম। তিনি বলেন, ঘৃণা নয়, যুক্তি ও সৌহার্দ্য দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন ঘিরে আবারও উত্তেজনা দেখা দিয়েছে অনলাইনে। বিশেষ করে নারী প্রার্থীদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে টার্গেট করা, চরিত্রহনন এবং অপপ্রচার নিয়ে সরব হয়েছেন ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের ভাইস প্রেসিডেন্ট (ভিপি) প্রার্থী সাদিক কায়েম।
শুক্রবার (২২ আগস্ট) বিকেল ৪টা ২৪ মিনিটে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে দেওয়া এক দীর্ঘ পোস্টে তিনি বিষয়টি প্রকাশ্যে তুলে ধরেন। পোস্টে সাদিক কায়েম অভিযোগ করেন, পরিকল্পিতভাবে অনলাইনে বিভিন্ন প্রার্থীর বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে ট্যাগিং, মিথ্যাচার, অপপ্রচার, হেয়প্রতিপন্নকরণ এবং সম্মানহানিকর প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি টার্গেট করা হচ্ছে নারী প্রার্থীদের, যা তার মতে নৈতিকভাবে ঘৃণ্য এবং রাজনীতির সুস্থ ধারা ও শিক্ষার্থীদের ভ্রাতৃত্ববোধের সম্পূর্ণ পরিপন্থি।
তিনি লেখেন, “আমরা বিশ্বাস করি, জুলাই-পরবর্তী সময়ে রাজনীতিতে প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে উৎসাহিত করা উচিত। শিক্ষার্থীদের কল্যাণে যে কোনো প্রতিযোগিতা রাজনৈতিক সৌন্দর্যের অংশ এবং এটি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির এক অনন্য বহিঃপ্রকাশ। তবে প্রতিযোগিতা হতে হবে ভ্রাতৃত্ব, যুক্তি, মূল্যবোধ ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে— ঘৃণা, মিথ্যাচার ও চরিত্রহননের মাধ্যমে নয়। তাই এ ধরনের হীন, নোংরা ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড আমাদের অবশ্যই পরিহার করতে হবে।”
সাদিক কায়েম আরও বলেন, “আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মী, সাধারণ শিক্ষার্থী এবং সারা দেশের বিবেকবান নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, আসুন আমরা সবাই অনলাইন বুলিং, হেয়প্রতিপন্নকরণ ও কুৎসা রটনা থেকে বিরত থাকি। রাজনীতির ঊর্ধ্বে মানবিকতা, ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্যকে প্রাধান্য দিই।”
তার মতে, সুস্থ প্রতিযোগিতা কখনোই ঘৃণা, মিথ্যাচার বা অনলাইন বুলিংয়ের মাধ্যমে সম্ভব নয়। তিনি মনে করেন, যদি রাজনীতিকে ইতিবাচক পথে এগিয়ে নিতে হয়, তবে অবশ্যই সহনশীলতা, ন্যায্যতা ও যুক্তির ভিত্তিতে এগোতে হবে।
সাদিক কায়েম বলেন, “আমরা এমন একটি সহনশীল রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে চাই, যেখানে ভিন্নমত থাকবে কিন্তু বৈরিতা থাকবে না; প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে কিন্তু শত্রুতা থাকবে না। এভাবেই নতুন রাজনীতির যাত্রাপথ শুরু হয়েছে এবং আমরা এই পথচলায় কোনোভাবেই থামব না।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ডাকসু নির্বাচনকে ঘিরে অনলাইন প্রোপাগান্ডা ও চরিত্রহনন শুধু নারী প্রার্থীদের জন্যই নয়, বরং সামগ্রিক রাজনীতির জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এর মাধ্যমে যেমন প্রার্থীদের মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করা হয়, তেমনি শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভাজনও বাড়ে। এই পরিস্থিতিতে সাদিক কায়েমের সতর্কবার্তা শিক্ষাঙ্গনে একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত তৈরি করতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে মতামত প্রকাশ করছেন। অনেকে বলছেন, নারী প্রার্থীদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে টার্গেট করা কেবল লজ্জাজনক নয়, এটি একটি নৈতিক অবক্ষয়ের বহিঃপ্রকাশ। এ ধরনের অপপ্রচার অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত।
ডাকসু নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা স্বাভাবিক হলেও, তা যেন কখনো অসুস্থ, নোংরা ও অমানবিক রূপ না নেয়, সেটিই এখন সবার প্রত্যাশা। সাদিক কায়েমের বার্তা সেই প্রত্যাশাকে নতুনভাবে সামনে এনেছে।