বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেছেন, ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের মনোনয়ন জমা ঠেকাতে পরিকল্পিতভাবে মব সৃষ্টি করা হয়েছে। তিনি অবাধ ও সুষ্ঠু ভোটের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কঠোর পদক্ষেপ দাবি করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনকে ঘিরে নতুন করে উত্তপ্ত হয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গন। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেছেন, ছাত্রদলকে মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দিতে পরিকল্পিতভাবে মব সৃষ্টি করা হয়েছে।
তিনি মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, “এত রক্ত ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা যে বাংলাদেশ অর্জন করেছি, সেটি এখনো আমাদের নাগালে আসেনি। মানুষ আজও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। সমাজে মব সংস্কৃতি এখনো প্রবলভাবে বিদ্যমান। ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল যেন মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পারে, সেই জন্যই সরকারপক্ষ পরিকল্পিতভাবে মব সৃষ্টি করে তাদের বাধা দিয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “একটি জাতির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সেটি নিশ্চিত করতে হলে অন্তর্বর্তী সরকারকে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে ভোটাররা কোনো ধরনের ভয়-ভীতি ছাড়াই কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারেন।”
রিজভী জানান, জনগণ এখন একটি সুস্পষ্ট নির্বাচনী রোডম্যাপের অপেক্ষায় আছে। তিনি দাবি করেন, রাজনৈতিক সুবিধা লাভের জন্য যেসব ভোটকেন্দ্র আগে নির্ধারণ করা হয়েছে, সেগুলো বাতিল করতে হবে। তাঁর ভাষায়, “ফ্যাসিবাদের সময় যে সব ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছিল, সেগুলো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ভোটারবান্ধব নয়। তাই জনগণের স্বার্থে সেগুলো প্রত্যাহার করে নতুন ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ করা জরুরি।”
বিএনপির এই শীর্ষস্থানীয় নেতা আরও বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্র চায়, তারা সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে তাদের প্রতিনিধিকে নির্বাচিত করতে চায়। যদি ভোটারবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত না হয়, তবে গণতন্ত্র আবারও হুমকির মুখে পড়বে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ছাত্রদলকে মনোনয়ন জমা দেওয়ার সুযোগ না দেওয়ার অভিযোগ দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন বিতর্ক তৈরি করেছে। এর মধ্য দিয়ে আবারও সামনে এসেছে মব সংস্কৃতির অভিযোগ, যা দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে।
এদিকে, দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনায় রিজভী আরও জানান, বিএনপি জনগণের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের আন্দোলন চালিয়ে যাবে। তিনি বলেন, “এই বাংলাদেশ কেবল কিছু গোষ্ঠীর জন্য নয়। এ দেশ সবার। তাই অবাধ ভোট নিশ্চিত করা এখন জাতীয় প্রয়োজন।”
বিশ্লেষকদের মতে, রিজভীর এই বক্তব্য দেশের নির্বাচনী রাজনীতিতে নতুন চাপ সৃষ্টি করবে। এখন দেখার বিষয়, অন্তর্বর্তী সরকার কীভাবে এই পরিস্থিতি সামাল দেয় এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের জন্য কার্যকর রোডম্যাপ তৈরি করে।