ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু নির্বাচন ঘিরে উত্তেজনা ছড়িয়েছে ক্যাম্পাসে। মনোনয়নপত্র সংগ্রহ শেষ হলেও ছাত্রদলের চূড়ান্ত প্যানেল এখনো ঘোষণা হয়নি। সিদ্ধান্ত দেবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পাঁচ বছর পর আবারও উত্তেজনায় ভরপুর হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা। ২৯ জুলাই তফসিল ঘোষণার পর থেকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। মনোনয়নপত্র সংগ্রহের শেষ দিনে সোমবার সিনেট ভবন মুখরিত হয়ে ওঠে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন, স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং কর্মীদের পদচারণায়।
প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ডাকসুর বিভিন্ন পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য মোট ৫৬৫ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। একইসাথে ১৮টি হল সংসদের জন্য মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন আরও ১,২২৬ জন শিক্ষার্থী। এতো বিপুল অংশগ্রহণে নির্বাচনকে ঘিরে জমে উঠেছে পুরো ক্যাম্পাস।
এবারের নির্বাচনে পাঁচটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছে। ইসলামী ছাত্রশিবির ঘোষণা করেছে ২৮ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল। ভিপি পদে মনোনয়ন পেয়েছেন আবু সাদিক কায়েম এবং জিএস পদে এস এম ফরহাদ। অন্যদিকে বাম গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট ঘোষণা করেছে আংশিক প্যানেল, যেখানে ভিপি পদে লড়বেন শেখ তাসনিম আফরোজ (ইমি) এবং জিএস পদে মেঘমল্লার বসু।
এছাড়া বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) অংশ নিচ্ছে "বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ" নামে একটি প্যানেল দিয়ে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমার নেতৃত্বেও রয়েছে আলাদা প্যানেল।
তবে সবচেয়ে আলোচিত হচ্ছে ছাত্রদল। সোমবার দুপুরের পর থেকে একাধিক ছাত্রদল নেতা আলাদা আলাদাভাবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। সংগঠনের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল যে, আগ্রহী শিক্ষার্থীরা প্রার্থী হতে চাইলে মনোনয়ন সংগ্রহ করবেন। কিন্তু কে কোন পদে লড়বেন—তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের দাবি, পুরো বিষয়টির সিদ্ধান্ত নেবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
সোমবার দুপুরে ভিপি পদে মনোনয়নপত্র নেন বিএম কাউসার, আবিদুল ইসলাম খান, মমিনুল ইসলাম জিসানসহ কয়েকজন নেতা। সাহিত্য-সংস্কৃতি সম্পাদক পদে ওবায়দুল্লাহ রেদওয়ান এবং তথ্য-গবেষণা সম্পাদক পদে জারিফ রহমানও মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। জিএস পদে মনোনয়নপত্র নেন ছাত্রদলের জসীমউদ্দীন হল শাখার আহ্বায়ক তানভীর বারী হামিম। তার সঙ্গে থাকা নেতাকর্মীরা স্লোগান দিতে দিতে সিনেট ভবনে প্রবেশ করেন।
তানভীর হামিম জানান, এখনও আমাদের প্যানেল চূড়ান্ত হয়নি। তবে আন্দোলনের রাজপথে যারা ছিলেন, তাদের নিয়েই প্যানেল গঠন করা হবে। আমরা বিশ্বাস করি, ছাত্রদল বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে ডাকসুর নেতৃত্বে আসবে।
প্যানেল চূড়ান্ত করতে বিলম্বের বিষয়ে ছাত্রদল নেতাদের ব্যাখ্যা—সংগঠনটি বিশাল হওয়ায় প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়ায় সময় লাগছে। প্রায় ৪০০ জন আগ্রহী প্রার্থীর মধ্যে থেকে চূড়ান্ত করা কঠিন কাজ। তবুও, সোমবার রাতে বা সর্বোচ্চ শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত আসবে বলে জানিয়েছেন তারা।
এদিকে, সংগঠনের ভেতর থেকে জানা গেছে, সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে সহসভাপতি (ভিপি) পদে আবিদুল ইসলাম খান আবিদ এবং সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে শেখ তানভীর বারী হামিমের নাম আলোচনায় রয়েছে। তবে শেষ সিদ্ধান্ত নেবেন তারেক রহমান।
একইদিন ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে মনোনয়নপত্র সংগ্রহে বাধা দেওয়ার ঘটনায় প্রতিবাদ জানাতে সংবাদ সম্মেলন করেছে ছাত্রদল। তারা অভিযোগ করে, শিক্ষার্থীদের মনোনয়ন গ্রহণে ইচ্ছাকৃতভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হয়েছে। এ ঘটনার সাথে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়।
অন্যদিকে, ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেল থেকেও বেশ কয়েকজন প্রার্থী নির্বাচনে লড়বেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই প্যানেল থেকে ভিপি পদে আব্দুল কাদের, জিএস পদে আবু বাকের মজুমদার এবং এজিএস পদে আশরেফা খাতুন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। তাদের মতে, একটি শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আস্থা তারা অর্জন করতে সক্ষম হবেন।
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির এবার তাদের ঘোষিত পূর্ণাঙ্গ প্যানেলে নারী প্রার্থী, জুলাই আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থী এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। সংগঠনটির নেতারা জানাচ্ছেন, এই নির্বাচনকে তারা একটি “প্রাণবন্ত প্রতিযোগিতা” করতে চান। তারা শিগগিরই ইশতেহার প্রকাশ করবেন এবং জুলাই বিপ্লবের আদর্শ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেছেন।
সব মিলিয়ে, ডাকসু নির্বাচনকে ঘিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখন উত্তেজনায় ভরপুর। শিক্ষার্থীরা অপেক্ষা করছেন কারা শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত প্যানেলে থাকবেন। বিশেষ করে ছাত্রদল—যাদের ভাগ্য নির্ধারণ করবে তারেক রহমানের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্তের দিকেই এখন সবার চোখ।