ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে বড় ধরনের চমক দিলো ছাত্রদল। ভিপি পদে আবিদুল ইসলাম খান ও জিএস পদে তানভীর বারী হামিমকে মনোনয়ন দিয়ে তারা নতুন নেতৃত্বের সমীকরণ তৈরি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাঙ্গন আবারও সরগরম হয়ে উঠেছে ডাকসু নির্বাচনের খবরে। বহু প্রতীক্ষিত এই নির্বাচনে অংশ নিতে নিজেদের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। দীর্ঘদিন পর ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের অংশগ্রহণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
বুধবার দুপুরে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে আয়োজিত এক সমাবেশে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব আনুষ্ঠানিকভাবে প্যানেলের নাম ঘোষণা করেন। ঐতিহাসিক অপরাজেয় বাংলার সামনে দাঁড়িয়ে তিনি জানান, “ডাকসু নির্বাচন শুধু নেতৃত্বের পরিবর্তন নয়, এটি ছাত্রসমাজের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই। আমরা সেই লড়াইয়ে জনগণের কণ্ঠস্বর হতে চাই।”
ঘোষিত প্যানেল অনুযায়ী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী আবিদুল ইসলাম খান ভিপি (ভাইস প্রেসিডেন্ট) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। সংগঠনটির নেতারা জানান, আবিদ তার সাহসী নেতৃত্ব, সংগঠনের প্রতি নিবেদন এবং শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর কারণে এ পদের জন্য সর্বসম্মতভাবে মনোনীত হয়েছেন।
এছাড়া, জিএস (সাধারণ সম্পাদক) পদে মনোনয়ন পেয়েছেন কবি জসীম উদ্দীন হল ছাত্রদলের আহ্বায়ক এবং উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী তানভীর বারী হামিম। তানভীর দীর্ঘদিন ধরে সংগঠনের বিভিন্ন কর্মসূচিতে সক্রিয় থেকে আলোচনায় এসেছেন। শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরতে তার ভুমিকা ইতিমধ্যে প্রশংসিত হয়েছে।
অন্যদিকে, এজিএস (সহকারী সাধারণ সম্পাদক) পদে মনোনয়ন পেয়েছেন বিজয় একাত্তর হল ছাত্রদলের আহ্বায়ক এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী তানভীর আল হাদী মায়েদ। ছাত্রদলের নেতারা মনে করছেন, এই তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্ব ছাত্রদলকে নতুন গতিপথ দেখাতে সক্ষম হবে।
ডাকসুর এই নির্বাচনী প্যানেল ঘোষণাকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, ছাত্রদলের এই সিদ্ধান্তে ক্যাম্পাসে নতুন ভারসাম্য তৈরি হবে। এতদিন বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা করলেও ছাত্রদলের তরফ থেকে এ ধরনের বড় পদক্ষেপ আসেনি। এবারকার ঘোষণা তাই রাজনীতির ময়দানে নতুন উত্তাপ ছড়িয়েছে।
ক্যাম্পাসের সাধারণ শিক্ষার্থীরাও ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের অংশগ্রহণকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন। ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, “অনেকদিন পর ডাকসুতে ছাত্রদলকে সক্রিয় দেখতে পাচ্ছি। এটি প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন নিশ্চিত করবে।” একইসঙ্গে শিক্ষার্থীরা আশা প্রকাশ করেছেন, নির্বাচিতরা যেন সত্যিকারের শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষা করেন।
উল্লেখ্য, ডাকসু নির্বাচন বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এটি শুধু নেতৃত্ব তৈরির ক্ষেত্র নয়, বরং দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতির দিক নির্দেশনারও প্রতিচ্ছবি। ছাত্রদলের নতুন প্যানেল ঘোষণার মাধ্যমে আসন্ন নির্বাচনে উত্তাপ আরও বেড়ে গেল বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।