ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু নির্বাচনে ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪৮ জন প্রার্থী। আলোচনায় রয়েছেন ছাত্রদল, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ, ছাত্রশিবির, ছাত্র অধিকার পরিষদসহ একাধিক প্যানেলের শীর্ষ নেতারা। এবার কার হাতে উঠবে ডাকসুর নেতৃত্ব, সেটিই এখন প্রশ্ন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন নিয়ে শুরু হয়েছে উত্তাপ। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময়সীমা শেষ হয়েছে, আর এবারের নির্বাচনে ভিপি পদে লড়ছেন মোট ৪৮ জন প্রার্থী। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা শিক্ষাঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
প্রার্থীদের তালিকায় সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের শীর্ষ নেতারা। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবিদ আল ইসলাম, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক আব্দুল কাদের, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান প্রকাশনা সম্পাদক আবু সাদিক (সাদিক কায়েম), ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিনইয়ামীন মোল্লা, স্বতন্ত্র প্রার্থী উমামা ফাতেমা, জামালুদ্দিন মোহাম্মদ খালিদসহ আরও অনেকেই ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
আলোচনায় সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছেন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক আব্দুল কাদের। জুলাই অভ্যুত্থানে তার সরাসরি নেতৃত্ব, আবরার ফাহাদের স্মরণসভা আয়োজনের কারণে গ্রেপ্তার হওয়া এবং নয় দফা আন্দোলনে সামনের সারিতে থাকার অভিজ্ঞতা তাকে শক্ত অবস্থানে দাঁড় করিয়েছে। নাগরিক পার্টির একাধিক নেতা ও শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যে তার পক্ষে সমর্থন জানাচ্ছেন।
অন্যদিকে, ছাত্রদলের প্রার্থী আবিদ আল ইসলামও সমান আলোচিত। অভ্যুত্থানের সময় মাঠে থেকে আন্দোলন পরিচালনা করা, ‘প্লিজ কেউ কাউকে ছেড়ে যাইয়েন না’—তার এই বিখ্যাত স্লোগান শিক্ষার্থীদের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। পরবর্তীতে ‘স্ফুলিঙ্গ থেকে দাবানল’ নামে বই প্রকাশ করে তিনি আরও জনপ্রিয়তা পান। দলীয় শক্তি এবং সংগঠনের ভিত্তি তার জন্য বড় একটি প্লাস পয়েন্ট হতে পারে।
ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রার্থী আবু সাদিক, যিনি ‘সাদিক কায়েম’ নামেই বেশি পরিচিত, অভ্যুত্থানের সময় নীতি নির্ধারণী ভূমিকা রাখেন। হলে হলে শিবিরের শক্ত উপস্থিতি এবং অনলাইনে ব্যাপক প্রচারণা তাকে এগিয়ে রাখছে।
ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিনইয়ামীন মোল্লা, যিনি ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূরের সংগঠন থেকেই উঠে এসেছেন, তিনি আন্দোলন, গ্রেপ্তার এবং দীর্ঘ কারাভোগের মধ্য দিয়ে তৈরি হয়েছেন। চব্বিশ সালের অভ্যুত্থানের পর থেকে একাধিক আন্দোলনে সামনের সারিতে ছিলেন তিনি। তার প্রতি শিক্ষার্থীদের সমর্থনও কম নয়।
এছাড়া নারী প্রার্থীদের মধ্যে আলোচনায় এসেছেন উমামা ফাতেমা। কবি সুফিয়া কামাল হলে নেতৃত্ব দিয়ে এবং পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র হয়ে তিনি নারীদের মধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। তার নারী নেতৃত্বই এবারের নির্বাচনে একটি বড় শক্তি হয়ে দাঁড়াতে পারে।
জামালুদ্দিন মোহাম্মদ খালিদও এবার আলোচনায়। ইসলামী ছাত্র আন্দোলন থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পর তিনি স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংসদ নামে নতুন সংগঠন গড়েন। ফিলিস্তিন সংহতি থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীদের অধিকার আন্দোলন—সবক্ষেত্রেই তার সরব উপস্থিতি রয়েছে।
আগামী ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিতব্য ডাকসু নির্বাচনে এই ৪৮ জন প্রার্থী নেতৃত্বের জন্য লড়বেন। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন প্যানেল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা প্রচারণা শুরু করেছেন। শিক্ষার্থীদের কাছে প্রতিশ্রুতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরছেন তারা।
এখন প্রশ্ন একটাই—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসুর ভিপি পদে শেষ হাসি কে হাসবেন?