সিলেটের ওসমানীনগরে দাফনের ১৭ দিন পর অলৌকিকভাবে জীবিত উদ্ধার হয়েছে কিশোর রবিউল ইসলাম নাঈম। এই ঘটনায় গ্রামজুড়ে শুরু হয়েছে চাঞ্চল্য ও নানা প্রশ্ন।
সিলেটের ওসমানীনগরে ঘটে গেল এক অভাবনীয় ঘটনা। দাফনের ১৭ দিন পর হঠাৎ করেই জীবিত উদ্ধার হলো সেই কিশোর, যাকে পরিবার ও গ্রামবাসী সবাই মৃত ভেবেছিল। রবিউল ইসলাম নাঈম (১৪) নামের ওই কিশোরকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করেছে পুলিশ, আর এ খবর ছড়িয়ে পড়তেই গোটা এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে চাঞ্চল্য ও অবিশ্বাস।
শনিবার (২৩ আগস্ট) মৌলভীবাজারের কুলাউড়া থানার পুলিশ নাঈমকে উদ্ধার করে। তাকে উদ্ধার করা হয় নবীগঞ্জ উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের এক আত্মীয়র বাড়ি থেকে। পরে আইনগত প্রক্রিয়া অনুসারে আদালতে পাঠানো হয় জবানবন্দি দেওয়ার জন্য।
কুলাউড়া থানার ওসি মো. ওমর ফারুক গণমাধ্যমকে এই ঘটনাটি নিশ্চিত করে বলেন, "তদন্তের এক পর্যায়ে কিশোর নাঈমকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। বর্তমানে তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে জবানবন্দি রেকর্ডের জন্য।"
উদ্ধারকৃত রবিউল ইসলাম নাঈম সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের গদিয়ারচর গ্রামের কণাই মিয়ার ছেলে।
অন্যদিকে, নাঈমকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করে তার পরিবার ইতিমধ্যেই একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছিল। সেই মামলার প্রধান আসামি বগুড়ার শিবগঞ্জের ব্যবসায়ী বুলবুল ফকির বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
ঘটনার শুরুটা হয়েছিল গত ২৪ জুলাই। সেদিন হঠাৎ করেই নিখোঁজ হয়ে যায় নাঈম। সে ওসমানীনগরের গোয়ালাবাজারের ব্রাহ্মণগ্রাম এলাকায় বুলবুল ফকিরের মালিকানাধীন একটি রেস্টুরেন্টে কাজ করত। নিখোঁজ হওয়ার পর তার মা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
এরপর ৩ আগস্ট মৌলভীবাজারের কুলাউড়া থানার এলাকায় অজ্ঞাতনামা এক কিশোরের লাশ উদ্ধার হয়। লাশটি দেখে নাঈমের পরিবার নিশ্চিত হয় যে এটি নাঈমের দেহ। পরে ৫ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে দাফনও সম্পন্ন করা হয়। সেদিন পরিবারের শোকের সীমা ছিল না। পুরো গ্রাম শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়ে।
এ ঘটনার পরপরই পরিবার কুলাউড়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে, যেখানে ব্যবসায়ী বুলবুল ফকিরকে প্রধান আসামি করা হয়। মামলার তদন্তের দায়িত্ব পেয়ে পুলিশ নানা দিক খতিয়ে দেখতে শুরু করে।
কুলাউড়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মুস্তাফিজুর রহমান শনিবার তদন্তের অংশ হিসেবে নাঈমের আত্মীয় মো. জুবেলের বাড়িতে অভিযান চালান। সেখান থেকেই জীবিত উদ্ধার করা হয় নাঈমকে। এসআই মুস্তাফিজ জানান, উদ্ধার করার পর নাঈমকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। সেখানে তার জবানবন্দি রেকর্ড করা হচ্ছে।
অপরদিকে, নাঈম জীবিত উদ্ধার হওয়ার ঘটনায় তার পরিবার এখনও কোনো মন্তব্য করেনি। তাদের সাথে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কেউ ফোন রিসিভ করেননি।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, যে লাশ দাফন করা হয়েছিল তা কার? কেন নাঈমকে মৃত বলে ভুল করা হলো? আর এই ঘটনার পেছনে কারও ষড়যন্ত্র আছে কি না, সেটিই এখন তদন্তের মূল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গ্রামের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী—সবাই এখন উত্তর খুঁজছে এই রহস্যজনক ঘটনায়। দাফনের ১৭ দিন পর জীবিত কিশোর ফিরে আসায় শোকাহত পরিবারে আনন্দ ফিরলেও, একইসঙ্গে তারা রয়েছেন দারুণ ধোঁয়াশায়।
এই ঘটনার সঠিক তদন্ত ও সত্য উদঘাটনের জন্য স্থানীয়দের দাবি, দ্রুত সময়ের মধ্যেই বিষয়টি পরিষ্কার করা হোক। কেননা, এমন এক ঘটনা বাংলাদেশে বিরল এবং অভাবনীয়, যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইতিমধ্যেই তীব্র আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে।