বহুদল ঘুরে অবশেষে ইসলামী আন্দোলনে যোগ দিলেন পিরোজপুর-৩ আসনের সাবেক এমপি ডা. রুস্তম আলী ফরাজি। চরমোনাই দরবারে যোগ দিয়ে তাঁকে হাতপাখার প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আবারও আলোচনায় উঠে এলেন পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়িয়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজি। বহু দল ঘুরে এবার তিনি ভিড়লেন চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশে। গতকাল শনিবার দুপুরে অনুসারীদের সঙ্গে ১৩টি বাসে করে চরমোনাই দরবারে যান তিনি। সেখানে ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দলে যোগ দেন। একই অনুষ্ঠানে তাঁকে ওই আসনে হাতপাখার প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
ডা. রুস্তম আলী ফরাজির রাজনৈতিক যাত্রা দীর্ঘ এবং রঙিন ইতিহাসে ভরপুর। তিনি এখন পর্যন্ত তিনটি দল থেকে চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। প্রথমবার ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী হয়ে সংসদে প্রবেশ করেন। ১৯৯৮ সালে জাপার ভাঙনের পর তিনি যোগ দেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জেপিতে। পরবর্তী সময়ে বিএনপিতে যোগ দেন এবং ২০০১ সালে বিএনপির টিকিটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
২০১৪ সালের নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন ভোট বর্জন করলে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নেন এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর তিনি ফের জাপায় যোগ দেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে মহাজোটের সমর্থনে জাপার প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়লাভ করেন। তবে পরবর্তীতে দলীয় কর্মসূচিতে সক্রিয় না থাকাসহ বিভিন্ন অভিযোগে জাপার সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের অবনতি ঘটে।
গত বছরের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে জাপা তাঁকে মনোনয়ন দেয়নি। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়লেও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন। এই ব্যর্থতার পর নতুন রাজনৈতিক ঠিকানা খুঁজতে থাকেন ফরাজি। অবশেষে চরমোনাই দরবারে গিয়ে তিনি ইসলামী আন্দোলনে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেন।
ইসলামী আন্দোলনের সহকারী মহাসচিব এবং চরমোনাই পীরের ভাই মুফতি সৈয়দ এসাহাক মোহাম্মদ আবুল খায়ের বলেন, “ডা. রুস্তম ২০১৭ সালেই ইসলামী আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। তবে বিতর্কিত নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কারণে তাঁর সদস্যপদ স্থগিত করা হয়। কিন্তু ক্ষমতার পরিবর্তনের পর থেকে তিনি আবারও দলের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ান। অবশেষে দরবারে এসে তিনি তওবা পাঠ করেন এবং আর দল না বদলানোর অঙ্গীকার করেন। ফলে তাঁর স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয় এবং তাঁকে প্রার্থী ঘোষণা দেওয়া হয়।”
ডা. ফরাজি নিজেও দাবি করেছেন, তিনি নতুন করে যোগ দেননি বরং পুরোনো সদস্যপদ নবায়ন করেছেন। তাঁর ভাষায়, “আমি ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ইসলামী আন্দোলনে যোগ দিই। পরে কিছু কারণে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলাম। সে জন্য আমার সদস্যপদ স্থগিত ছিল। তবে আমি ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করিনি।”
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে দলবদলের ঘটনা নতুন নয়। তবে ডা. রুস্তম ফরাজির মতো একজন রাজনীতিকের ক্যারিয়ার দল পরিবর্তনের নানা অধ্যায়ে ভরা। বিএনপি, জাপা, জেপি, স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া—সবই তিনি করেছেন। এখন আবার ইসলামী আন্দোলনের হাতপাখার পতাকা নিয়ে ভোটের মাঠে নামতে যাচ্ছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করছে। বিশেষ করে চরমোনাই দরবারের অনুসারীদের কারণে দক্ষিণাঞ্চলে দলটির শক্ত ঘাঁটি রয়েছে। ডা. রুস্তম ফরাজির মতো অভিজ্ঞ প্রার্থী দলে যোগ দেওয়ায় ইসলামী আন্দোলন আরও শক্তিশালী হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, ফরাজির এই সিদ্ধান্তকে অনেকেই তাঁর রাজনৈতিক টিকে থাকার কৌশল হিসেবে দেখছেন। কারণ, গত নির্বাচনে পরাজয়ের পর তিনি নতুনভাবে রাজনীতিতে সক্রিয় হতে চাইছিলেন। চরমোনাই দরবারের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে তিনি আবারও সংসদে ফেরার স্বপ্ন দেখছেন।
রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন বড় প্রশ্ন হলো—রুস্তম আলী ফরাজি আসন্ন নির্বাচনে হাতপাখার প্রতীকে কতটা ভোট টানতে পারবেন। তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা এবং স্থানীয় জনপ্রিয়তা ইসলামী আন্দোলনের পক্ষে কতটা সুফল বয়ে আনবে তা এখন সময়ই বলে দেবে।