চট্টগ্রামে এতিমখানার ফ্রিজ থেকে কাঁচা মাছ-মাংস চুরি

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
In Chattogram’s Bayezid area, thieves stole fish and meat worth around Tk 30,000 from an orphanage, leaving 110 orphan children struggling for food.

চট্টগ্রামের বায়েজিদে এক এতিমখানা থেকে প্রায় ৩০ হাজার টাকার মাছ-মাংস চুরি হয়ে গেছে। এ ঘটনায় ১১০ জন এতিম শিশু মানবেতর জীবন যাপন করছে।

চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ এলাকায় ঘটেছে এক হৃদয়বিদারক ঘটনা। স্থানীয় একটি হেফজ ও এতিমখানার ফ্রিজ থেকে প্রায় ৩০ হাজার টাকার মাছ-মাংস চুরি হয়ে গেছে। এতে করে এতিমখানার ১১০ জন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা চরম মানবেতর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছেন।

ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) গভীর রাতে বায়েজিদ লিংক রোডের পাশে অবস্থিত জালালাবাদ তালিমুল কোরআন হেফজ ও এতিমখানায়। জানা যায়, রান্নাঘরের টিন ফুটো করে দুর্বৃত্তরা প্রবেশ করে ফ্রিজ থেকে গরুর মাংস, খাসির মাংস এবং বিভিন্ন প্রজাতির মাছ নিয়ে যায়। চুরিকৃত মাছ-মাংসের পরিমাণ ৩০ কেজিরও বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর বাজারমূল্য প্রায় ৩০ হাজার টাকা।

এতিমখানায় ১১০ জন শিশু পড়াশোনা করছে, যাদের অধিকাংশই এতিম। এছাড়া ৭ জন শিক্ষক এবং ১ জন বাবুর্চি রয়েছেন। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকা অনুযায়ী সপ্তাহে দুই দিন মাছ, দুই দিন মাংস এবং বাকি দিনগুলোতে সবজি ও অন্যান্য তরকারি রান্না হয়। চুরির কারণে অন্তত ১০ দিনের মাছ-মাংস একসাথে হারিয়ে গেছে, ফলে শিক্ষার্থীদের খাবার ব্যবস্থায় বড় ধরনের সংকট দেখা দিয়েছে।

ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, “এতিম শিশুদের মুখের খাবারও নিরাপদ নয় এই দেশে।” ভিডিওটি ব্যাপকভাবে ভাইরাল হলেও এখনো থানায় কোনো অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।

সামাজিক সংগঠন স্মাইল বাংলাদেশের পরিচালক নজরুল ইসলাম জয় জানান, “গত বৃহস্পতিবার রাতে রান্নাঘরের টিন ফুটো করে দুর্বৃত্তরা ফ্রিজ থেকে প্রায় ৩০ কেজি মাছ-মাংস নিয়ে যায়। এর আগে আমরা রান্নাঘরের জন্য নতুন টিন দিয়েছিলাম, কিন্তু সেগুলোও চুরি হয়ে গেছে। এখন এতিমখানার শিশুরা চরম দুর্দশায় আছে।” তিনি সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

এতিমখানার পরিচালক মাওলানা মোস্তাক আহমেদও একই উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “আমাদের এতিমদের খাবারের ফ্রিজ ভেঙে মাছ-মাংস নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এর আগে টিনের চালও চুরি হয়ে গেছে। আমরা চাই সমাজের সবার সহযোগিতা।”

এই ঘটনায় সমাজে নৈতিক অবক্ষয়ের চিত্র আবারও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। যে খাবারগুলো অসহায় এতিমদের জন্য সংরক্ষিত ছিল, তা চুরি হয়ে যাওয়া শুধু আর্থিক ক্ষতিই নয়, বরং মানবিক দিক থেকেও ভয়াবহ। এখন দেখা যাচ্ছে, শিশুদের মুখের খাবারও দুর্বৃত্তদের হাত থেকে নিরাপদ নয়।

এতিমখানার শিশুরা জানায়, তারা প্রতিদিনের খাবারের অপেক্ষায় থাকে, কিন্তু হঠাৎ এ চুরির ঘটনায় তারা না খেয়ে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। অনেকেই ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, দেশের বিত্তবানরা যদি সামান্য সহায়তার হাত বাড়ান, তাহলে এতিমদের দুঃখ কষ্ট অনেকটাই লাঘব হবে।

চুরির এই ঘটনায় স্থানীয় এলাকাবাসীও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তারা বলছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবহেলার কারণে এমন ঘটনা ঘটছে। এ ধরনের অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে শাস্তির আওতায় আনা না হলে ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

অন্যদিকে, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ইতিমধ্যে ঘটনাটি জানার পর সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। অনেকেই বলছে, এসব এতিমখানাকে সুরক্ষার জন্য আলাদা নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রয়োজন, যাতে আর কোনো শিশুদের মুখের খাবার চুরি না হয়।

চট্টগ্রামের বায়েজিদে এতিমখানার এই ঘটনা এখন শুধু স্থানীয় সমস্যা নয়, বরং জাতীয়ভাবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এ থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, সমাজের সবচেয়ে অসহায় মানুষদের নিরাপত্তার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া এখন সময়ের দাবি।

لم يتم العثور على تعليقات