close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

চট্টগ্রাম সিটির মেয়র প্রতিমন্ত্রী মর্যাদা পাওয়ায় নতুন দিগন্তের সম্ভাবনা..

ওসমান এহতেসাম avatar   
ওসমান এহতেসাম
****

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনকে সরকার প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা প্রদান করেছে—এটি নিঃসন্দেহে এক সময়োপযোগী, বাস্তবমুখী এবং দূরদর্শী সিদ্ধান্ত। চট্টগ্রাম বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী, দেশের অর্থনীতির হৃদপিণ্ড এবং প্রধান সমুদ্রবন্দরের আবাসভূমি। এই শহরের উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব যার হাতে, তাকে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দেয়া শুধু সম্মানসূচক সিদ্ধান্ত নয়, বরং কার্যকর প্রশাসনিক সমন্বয় ও উন্নয়নের জন্য এক কৌশলগত পদক্ষেপ। আমরা এই গুরুত্বপূর্ণ সম্মানে ভূষিত হওয়ার জন্য মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। তিনি রাজনীতিতে একজন সংগ্রামী ও ত্যাগী নেতা হিসেবে সুপরিচিত, যিনি ছাত্রজীবন থেকেই গণমানুষের পক্ষে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে এসেছেন। পাকিস্তান আমল থেকে এই শহরে যেসব পরিবার চিকিৎসক বা বুদ্ধিজীবী হিসেবে অবস্থান করে আসছে, তার মধ্যে ডা. শাহাদাত হোসেনের পরিবার অন্যতম। চিকিৎসক হিসেবে সফল ক্যারিয়ার গড়ার পর তিনি তার সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গীকারকে সামনে রেখে রাজনীতিকে বেছে নেন। বারবার প্রলোভন, নিপীড়ন ও ষড়যন্ত্রের মুখে থেকেও তিনি আপসহীন ছিলেন। একাধিকবার মিথ্যা মামলায় তাকে কারাবরণ করতে হয়েছে, কিন্তু তিনি ন্যায় ও মানুষের অধিকার রক্ষার লড়াই থেকে পিছু হটেননি। দলীয় দায়িত্বে তিনি নগর বিএনপির সভাপতি হিসেবে তার নেতৃত্বে সংগঠনকে সুসংহত করেছেন, আবার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে মেয়র হয়েও তিনি প্রমাণ করেছেন তিনি একজন কর্মযোগী জনপ্রতিনিধি। সম্প্রতি তার নেতৃত্বে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের যে দৃশ্যমান পরিবর্তন ঘটেছে, তা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি নগরের পরিচ্ছন্নতা ব্যবস্থাপনা আধুনিক করেছেন, বিভিন্ন ওয়ার্ডে রাস্তাঘাট ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, নাগরিক সেবায় দুর্নীতিমুক্ত, সহজ ও দ্রুতসেবা নিশ্চিত করতে চালু করেছেন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম। পুরাতন রেলস্টেশন এলাকাকে আধুনিক ‘স্মার্ট স্পট’ হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ, পতেঙ্গা এলাকায় সমুদ্র-ভিত্তিক পর্যটন উন্নয়ন এবং নগরের ঐতিহাসিক স্থানগুলো সংরক্ষণের তার পরিকল্পনা নগরবাসীর কাছে প্রশংসিত হয়েছে। সম্প্রতি তার নেতৃত্বে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের যে দৃশ্যমান পরিবর্তন ঘটেছে, তা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বিশেষ করে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র কয়েক মাসের মাথায় তিনি যে ‘বড় চমক’ দেখিয়েছেন, তা ইতিহাসে নজিরবিহীন। ৩০ বছর পর প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে আদায় করেছেন ১০০ কোটি টাকার পৌর কর, যা অতীতে কোনো মেয়রের পক্ষে সম্ভব হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে চসিকের নির্ধারিত পৌরকর পরিশোধ না করে আসা বন্দরের বিরুদ্ধে তিনি শুধু চিঠিপত্রেই থেমে থাকেননি, বরং মন্ত্রণালয়ের দপ্তরে গিয়ে দৃঢ় অবস্থান নেন এবং শেষ পর্যন্ত নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বন্দরের চেয়ারম্যানের হাত থেকে নিজের কার্যালয়ে ১০০ কোটি টাকার চেক গ্রহণ করেন। এই অর্জনের ফলে চসিকের রাজস্ব বেড়েছে, স্বয়ংসম্পূর্ণ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে গতি এসেছে, এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ভর্তুকি বৃদ্ধির মাধ্যমে নাগরিক সেবা সম্প্রসারণের পথ সুগম হয়েছে। স্বাধীনতার পর এই প্রথম চসিক বন্দর থেকে পুরো পৌরকর আদায় করতে সক্ষম হলো—এমন সাফল্য শুধু তার প্রশাসনিক দক্ষতাই নয়, তার দূরদর্শিতা, সাহস এবং জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতারও এক উজ্জ্বল প্রমাণ।

সরকার যে তাকে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দিলো, সেটি চট্টগ্রামবাসীর মর্যাদাকেও বৃদ্ধি করেছে। তবে শুধুমাত্র প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে থেমে থাকলে হবে না—মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনকে বাস্তবিক অর্থে ক্ষমতায়ন করতে হবে। প্রশাসনিক ও আর্থিকভাবে তাকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। তার জন্য আলাদা বরাদ্দ ও প্রকল্প বাস্তবায়নে কেন্দ্রীয় সরকারের সহযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দর, রপ্তানি শিল্প, নগর পরিবহন, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, আবর্জনা পুনর্ব্যবহার, স্মার্ট সিটি বাস্তবায়ন, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং জলাবদ্ধতা নিরসনের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে মেয়রকে কার্যকর কর্তৃত্ব ও বাজেট সহায়তা দিলে তিনি অভূতপূর্ব উন্নয়নের উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারবেন। কারণ, তিনি শুধু একজন রাজনৈতিক নেতা নন, তিনি একজন পেশাদার চিকিৎসক, সুশৃঙ্খল সংগঠক এবং স্বচ্ছ ভাবমূর্তির জনপ্রতিনিধি—যার হাত ধরে চট্টগ্রাম একটি আন্তর্জাতিক মানের নগরীতে রূপ নিতে পারে। বর্তমান সময়ে যখন সারাদেশে ডা. শাহাদাত হোসেন-ই একমাত্র মেয়র, তখন একজন মেয়রকে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দেয়ার মাধ্যমে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হলো, তা সকলের জন্য অনুকরণীয় উদাহরণ হয়ে উঠবে। কিন্তু শর্ত একটাই—মর্যাদা দিতে হবে অর্থবহভাবে, বাস্তবিক ক্ষমতার মাধ্যমে। তাহলেই এই সিদ্ধান্ত কাগজে-কলমে নয়, বাস্তব উন্নয়নে পরিণত হবে।

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট
ইমেইল: osmangonistudent5@gmail.com

Nema komentara