চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সামনে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে অবরুদ্ধ কর্মকর্তারা, শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট।
চট্টগ্রামে শিক্ষা বোর্ডের সামনে শুরু হয়েছে উত্তপ্ত শিক্ষার্থী বিক্ষোভ। মঙ্গলবার (২২ জুলাই) দুপুর দেড়টার দিকে নগরের মুরাদপুর এলাকায় চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের মূল ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করে।
তাদের প্রধান দাবি, অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা এবং সচিবের পদত্যাগ।
শিক্ষার্থীরা প্রথমে বোর্ড ভবনের সামনে অবস্থান নিলেও কিছু সময়ের মধ্যেই মূল সড়কে নেমে আসে এবং বাঁশ ফেলে অবরোধ সৃষ্টি করে। সড়কে অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীরা একাধিকবার স্লোগান দিতে থাকে—"পদত্যাগ চাই", "শিক্ষার্থীর সাথে অবিচার চলবে না", "এইচএসসি নিয়ে খেলাধুলা বন্ধ করো" ইত্যাদি।
এ ঘটনায় শিক্ষা বোর্ড ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। দুপুর ৩টা পর্যন্ত চলা এই প্রতিবাদে মূল শহরের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি রুটসহ কয়েক কিলোমিটার জুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কয়েকশো শিক্ষার্থী মিছিলের পাশাপাশি হাতে জাতীয় পতাকা নিয়ে অবস্থান করছে। অনেকের চোখে ছিল ক্ষোভ আর হতাশা। মাঝে মাঝে মানবিক বিবেচনায় শিক্ষার্থীরা কিছু যানবাহনকে চলাচলের সুযোগ দিলেও অধিকাংশ সময়ই অবরোধ ছিল কঠোর।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা জানান, ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় শিক্ষার্থীরা গভীর মানসিক আঘাত পেয়েছে। এমন এক সময়ে রাত ৩টায় পরীক্ষা স্থগিতের বিজ্ঞপ্তি দেওয়াকে তারা দায়িত্বজ্ঞানহীন সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখছে। তারা বলছে, “আমাদের মানসিক অবস্থা বিবেচনা না করে কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা নিয়ে খেলছে। এর দায় শিক্ষা উপদেষ্টা ও সচিবকে নিতে হবে।”
এই পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার নেছার উদ্দীন আহমেদ জানান, “মুরাদপুর সড়কটির বিকল্প কোনো সড়ক নেই। এটি দিয়ে মূল শহরসহ কক্সবাজার, বান্দরবানসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে যানবাহন চলাচল করে। অবরোধের ফলে পুরো শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “মাইলস্টোনের ঘটনার পরে আমিও স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারছি না। বাচ্চাদের মুখগুলো চোখে ভেসে উঠছে। আমরা শিক্ষার্থীদের বোঝানোর চেষ্টা করছি, যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের পথ খোঁজা যায়।”
এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আন্দোলন চলমান রয়েছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ রুটগুলোতে বিপুল সংখ্যক যানবাহন আটকে আছে, আর সাধারণ মানুষ পড়েছে চরম দুর্ভোগে।
নিরাপত্তার স্বার্থে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এখন দেখার বিষয়—দাবির মুখে শিক্ষা উপদেষ্টা ও সচিব কী অবস্থান নেন এবং সরকার কী পদক্ষেপ গ্রহণ করে।