চীন সীমান্তের কাছে উত্তর কোরিয়ার অপ্রকাশিত ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি শনাক্ত করেছে মার্কিন থিঙ্ক ট্যাঙ্ক। এতে পারমাণবিক সক্ষম আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নতুন হুমকি সৃষ্টি করেছে।
চীন সীমান্ত সংলগ্ন উত্তর কোরিয়ার এক অপ্রকাশিত ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটির অস্তিত্ব সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে। মার্কিন থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ (CSIS) এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই গোপন ঘাঁটিটি পূর্ব এশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র উভয়ের জন্যই সম্ভাব্য এক মারাত্মক পারমাণবিক হুমকি হয়ে উঠতে পারে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ‘সিনপুং-ডং’ নামের এই ঘাঁটিটি চীন সীমান্ত থেকে মাত্র ২৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সেখানেই সংরক্ষিত থাকতে পারে নয়টি পারমাণবিক সক্ষম আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (ICBM) এবং মোবাইল লঞ্চার। এটি উত্তর কোরিয়ার ১৫ থেকে ২০টি ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটির মধ্যে অন্যতম, যা এতদিন গোপন রাখা হয়েছিল।
সিএনএন জানায়, এই প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে স্যাটেলাইট চিত্র, উত্তর কোরিয়ার পালিয়ে আসা শরণার্থী এবং সাবেক কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকার, গোপনীয় নথি এবং উন্মুক্ত তথ্যভাণ্ডারের বিশ্লেষণের ভিত্তিতে। এতে বলা হয়েছে, এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো পূর্ব এশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডের জন্য সরাসরি পারমাণবিক হুমকি তৈরি করতে সক্ষম।
গত কয়েক বছরে কিম জং উনের নেতৃত্বে উত্তর কোরিয়া দ্রুত তাদের অস্ত্র কর্মসূচি সম্প্রসারণ করেছে। নতুন ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন, সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকীকরণ এবং নিয়মিত পরীক্ষার মাধ্যমে দেশটি নিজেদের পারমাণবিক সক্ষমতা বহুগুণে বাড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্রগুলো এখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় যেকোনো স্থানে আঘাত হানতে সক্ষম।
এই ঘাঁটিটি এক সরু পাহাড়ি উপত্যকায় নির্মিত। এর বিস্তৃতি প্রায় ৫,৪৩৬ একর—যা নিউ ইয়র্কের কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের চেয়েও বড়। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ঘাঁটিটিতে সরাসরি হামলা চালাতে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশ দ্বিধাগ্রস্ত হতে পারে। কারণ, এর যেকোনো সামরিক প্রভাব সরাসরি চীনকে প্রভাবিত করতে পারে, যা আন্তর্জাতিক কূটনীতির জন্য অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করবে।
মার্কিন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এই ঘাঁটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০০৪ সালে এবং ২০১৪ সাল থেকে এটি কার্যকর রয়েছে। বর্তমানে ঘাঁটিটি সুরক্ষিত এবং সক্রিয়ভাবে উন্নয়ন হচ্ছে। স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, ঘাঁটির অভ্যন্তরে প্রবেশদ্বার চেকপয়েন্ট, সদর দপ্তর, গুদাম, ক্ষেপণাস্ত্র সহায়তা কেন্দ্র, আবাসন ভবন এবং বিশেষায়িত লঞ্চার সুবিধা রয়েছে। অনেক স্থাপনা গাছপালা ও ঝোপঝাড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে, যাতে সেগুলো স্যাটেলাইট চিত্রে সহজে ধরা না পড়ে।
যদিও ঘাঁটিতে কোন মডেলের ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে তা স্পষ্ট নয়, গবেষকদের ধারণা এটি উত্তর কোরিয়ার ‘Hwasong-15’ অথবা ‘Hwasong-18’ ধরণের আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে সজ্জিত হতে পারে। মোবাইল লঞ্চার থাকায় এগুলো দ্রুত মোতায়েন বা স্থানান্তর করা সম্ভব হবে—যা যুদ্ধ পরিস্থিতিতে উত্তর কোরিয়াকে কৌশলগত সুবিধা দেবে।
বর্তমানে উত্তর কোরিয়ার কাছে ৪০ থেকে ৫০টির মতো পারমাণবিক ওয়ারহেড রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এই অস্ত্রগুলো কেবল আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, বরং মার্কিন মূল ভূখণ্ডেও পৌঁছানোর সক্ষমতা রাখে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কিম জং উন প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, দেশটি তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি আরও সুসংগঠিত এবং শক্তিশালী করবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই গোপন ঘাঁটি প্রকাশ্যে আসায় যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য এটি নতুন এক নিরাপত্তা সংকট তৈরি করবে। চীনের এত কাছাকাছি অবস্থানের কারণে সরাসরি সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, যা পূর্ব এশিয়ার ভূরাজনীতিতে আরও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করবে।