চলচ্চিত্র থেকে বিদায় নিতে যাচ্ছেন অনন্ত জলিল। সন্তানরা ইসলামি শিক্ষায় মনোনিবেশ করছে—এই কারণেই সিনেমা জগৎ ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। হাতে থাকা অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করেই সরে দাঁড়াবেন এই জনপ্রিয় নায়ক।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে প্রযুক্তিনির্ভর সিনেমা নির্মাণের মাধ্যমে আলাদা পরিচিতি তৈরি করা চিত্রনায়ক অনন্ত জলিল অবশেষে ঘোষণা দিলেন অভিনয় থেকে সরে দাঁড়ানোর। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ও তার স্ত্রী নায়িকা বর্ষা একসঙ্গে বড় পর্দায় কাজ করেছেন। কিন্তু এখন জীবনের নতুন বাস্তবতায় এসে তিনি বলছেন—সন্তানদের ধর্মীয় শিক্ষার কারণে আর চলচ্চিত্রে অভিনয় করা তার পরিবারের জন্য উপযুক্ত নয়।
শনিবার রাতে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে অংশ নিয়ে অনন্ত জলিল খোলামেলাভাবে তার সিদ্ধান্তের কথা জানান। তিনি বলেন, আমাদের দুই সন্তান বড় হচ্ছে। ওরা ইসলামিক শিক্ষা নিচ্ছে। একজন ইতিমধ্যে কোরআনের হাফেজ হওয়ার পথে, আরেকজনও কোরআন রিডিং শেষ করেছে। তারা এখন মাদ্রাসায় পড়াশোনা করছে। এ অবস্থায় যদি আমরা সিনেমায় অভিনয় চালিয়ে যাই, সেটা ওদের কাছে ভালো লাগবে না। আমার কাছেও অস্বস্তিকর মনে হবে।
চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারের শুরু থেকে ভিন্নধর্মী কনসেপ্ট, আন্তর্জাতিক শিল্পীদের সম্পৃক্ততা এবং আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার অনন্ত জলিলকে আলোচনায় নিয়ে আসে। তার প্রযোজনা সংস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া সিনেমাগুলোতে বরাবরই স্ত্রী বর্ষা ছিলেন সহশিল্পী। তাদের অভিনীত বহু ছবি দেশে যেমন আলোড়ন তুলেছে, তেমনি বিদেশেও দর্শকদের আকর্ষণ করেছে।
তবে সময়ের পরিবর্তন অনন্তকে ভিন্ন সিদ্ধান্তে নিয়ে এসেছে। তিনি জানান, হাতে থাকা কিছু অসমাপ্ত কাজ শেষ করেই তিনি ও বর্ষা সিনেমা থেকে বিদায় নেবেন। বর্তমানে তাদের অভিনীত ‘দ্য স্পাই’ এবং ‘নেত্রী দ্য লিডার’ ছবির কাজ চলছে, যেখানে ভারতের জনপ্রিয় কয়েকজন অভিনেতাও অভিনয় করছেন। এই প্রজেক্টগুলো শেষ হওয়ার পরই তারা চলচ্চিত্র থেকে সরে দাঁড়াবেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন এই তারকা দম্পতি।
অনন্ত আরও বলেন, আমাদের হাতে দুই–তিনটা কাজ আছে। অর্ধেক শেষ, অর্ধেক বাকি। এগুলো শেষ করেই হয়তো সিনেমা থেকে দূরে সরে যাবো। আসলে করোনার পর থেকে ব্যবসার দিকে বেশি মনোযোগ দিতে হচ্ছে। বিশাল কর্মসংস্থানের বিষয় রয়েছে। সময় দিতে না পারলে সেটি টিকবে না।
তার এই ঘোষণা শুধু ভক্তদের জন্যই নয়, চলচ্চিত্র অঙ্গনের জন্যও একটি বড় খবর। কারণ গত এক যুগে তিনি নিজের মতো করে একটি শক্ত অবস্থান তৈরি করেছিলেন। অনেক সমালোচনার মাঝেও অনন্ত জলিল বারবার প্রমাণ করেছেন, ভিন্নধর্মী গল্প আর প্রযুক্তিনির্ভর সিনেমা নির্মাণে তিনি অনন্য।
তবে বাস্তবতার কাছে নতিস্বীকার করে তিনি এখন সন্তানের ধর্মীয় শিক্ষা ও ব্যবসার ভবিষ্যৎকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন। অনেকের মতে, এ সিদ্ধান্ত তার ব্যক্তিগত জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়, যা তাকে আরও ভিন্ন এক জীবনধারার দিকে এগিয়ে নেবে।