বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমানকে জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করায় শোকজ করেছে বিএনপি। তাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে লিখিত জবাব দিতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলোচিত জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে বিএনপির ভেতরে। দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমানের কিছু বক্তব্য নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে তাকে অবশেষে শোকজ করেছে বিএনপি। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ আগস্ট রবিবার বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে একটি লিখিত নোটিশ পাঠানো হয়। ওই নোটিশে তাকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে লিখিতভাবে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
শোকজ নোটিশে বলা হয়, ফজলুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে জুলাই-আগস্ট ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান সম্পর্কে ‘কুরুচিপূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর’ মন্তব্য করে আসছেন। তার এমন বক্তব্য শুধু শহীদদের আত্মদানকেই অসম্মান জানাচ্ছে না, বরং দলের আদর্শ ও আন্দোলনের চেতনাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে। নোটিশে আরও উল্লেখ করা হয়, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে বিএনপির চার শতাধিক নেতাকর্মী এবং ছাত্র-জনতার প্রায় দেড় হাজার মানুষ প্রাণ দিয়েছেন। তাছাড়া এ আন্দোলনে ত্রিশ হাজারেরও বেশি মানুষ গুরুতর আহত হন। অথচ ফজলুর রহমান নিয়মিত এমন মন্তব্য করে যাচ্ছেন যা এ সকল ত্যাগ ও আত্মদানকে অপমান করছে।
দলীয় দপ্তরের নোটিশে আরও বলা হয়, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের মহিমান্বিত আন্দোলন নিয়ে এ ধরনের বিভ্রান্তিকর বক্তব্য জনগণের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। অনেকেই এটিকে বিএনপির সুনাম ক্ষুণ্ন করার একটি সুপরিকল্পিত প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন। আরও অভিযোগ তোলা হয়, ফজলুর রহমান শুধু রাজনৈতিকভাবেই নয়, জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিকেও আঘাত করেছেন তার বক্তব্যে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড দলীয় শৃঙ্খলার পরিপন্থি বলে উল্লেখ করে তাকে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে যে, কেন তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তা লিখিতভাবে ব্যাখ্যা দিতে হবে।
রাজনৈতিক মহলে মনে করা হচ্ছে, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিএনপির ভেতরে দ্বন্দ্ব আরও তীব্র হতে পারে। দলের ভেতরে দীর্ঘদিন ধরেই নানা ইস্যুতে মতপার্থক্য দেখা দিচ্ছে। বিশেষ করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে বিএনপির অবস্থান খুবই স্পষ্ট থাকলেও ফজলুর রহমানের মন্তব্য সেটিকে দুর্বল করে দিয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি এখন একটি কঠিন সময় পার করছে। একদিকে দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে হচ্ছে, অন্যদিকে নেতাদের বিতর্কিত বক্তব্য সামলাতে হচ্ছে।
এদিকে ফজলুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, তিনি শোকজ নোটিশ পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে তিনি দলের প্রতি অনুগত আছেন এবং ব্যাখ্যা দেবেন বলেও জানিয়েছেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, তার লিখিত জবাবের পর বিএনপি পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে। যদি তার ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হয়, তবে তার বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি বড় মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। ওই সময়কার আন্দোলনে ছাত্র-জনতা, বিএনপির নেতাকর্মীসহ হাজারো মানুষ গণতন্ত্রের দাবিতে আত্মত্যাগ করেন। বিএনপি বারবার দাবি করেছে, এই আন্দোলনই দেশে গণতন্ত্রের নতুন সূচনা ঘটিয়েছে। তাই এ বিষয়ে বিভ্রান্তিকর মন্তব্য দলীয় আদর্শের পরিপন্থি বলেই মনে করছে শীর্ষ নেতৃত্ব।
রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন সবার নজর ফজলুর রহমানের জবাবের দিকে। তিনি কীভাবে তার বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেন এবং বিএনপি পরবর্তীতে কী ব্যবস্থা নেয়—সেটিই এখন মূল আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে।