ছাত্রলীগ কর্মীকে জুতার মালা পরিয়ে পুলিশে দিল ছাত্রদল

Mamun Sorder  avatar   
Mamun Sorder
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক উত্তেজনার মাঝে নতুন করে হঠাৎ করে চাঞ্চল্য! ছাত্রলীগের এক কর্মীকে মারধর করে জুতার মালা পরিয়ে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা পুলিশে দিয়েছে—ঘটনার পর পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে..

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক অঙ্গনে আবারও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ সংগঠন হিসেবে পরিচিত ছাত্রলীগের এক সক্রিয় কর্মী শাওন হোসেনকে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে মারধর করে এবং তাকে জুতার মালা পরিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে। এই ঘটনার পর পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে নিরাপত্তাহীনতা ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

সোমবার (১৪ এপ্রিল) রাত আনুমানিক সাড়ে ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রণী ব্যাংক সংলগ্ন এলাকা থেকে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা শাওন হোসেনকে আটক করে। শাওন পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং ছাত্রলীগের সিএফসি গ্রুপের পরিচিত মুখ। ছাত্রদলের দাবি অনুযায়ী, শাওন পূর্বে তাদের এক কর্মীর উপর হামলার সাথে সরাসরি যুক্ত ছিল।

শাওনকে আটকের পর প্রথমে তাকে মারধর করে সেন্ট্রাল ফিল্ডে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পরে সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্টে অবস্থিত পুলিশ বক্সে হস্তান্তর করা হয়। অভিযুক্ত এই ছাত্রলীগ কর্মীকে মারধরের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কোনো প্রতিনিধিকে দেখা যায়নি—যা প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা এবং অনুপস্থিতি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।

জিরো পয়েন্টে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তারা শাওনকে তাৎক্ষণিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে মেডিকেল অফিসার তার শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় দ্রুত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। মেডিকেল অফিসারের ভাষ্যমতে, শাওনের "প্যানিক ডিসঅর্ডার" রয়েছে, যা তার হৃদস্পন্দনে প্রভাব ফেলছে এবং হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

ভুক্তভোগী শাওন বলেন, “আমি জুলাই মাসে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পক্ষে ছিলাম। ৯ তারিখের পর বাড়ি চলে যাই এবং তারপর আর কোনো আন্দোলন বা পোস্টে যুক্ত ছিলাম না। আমাকে পরিকল্পিতভাবে টার্গেট করা হয়েছে।”

অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের কর্মী শামিম বলেন, “ছাত্রদলের সঙ্গে আমার গোপন যোগাযোগ ছিল যা শাওন জেনে ফেলেছিল। এরপর থেকে সে আমার উপর নজরদারি করতো, আমাকে মারধর করে এবং ক্যাম্পাসে আসতেও বাধা দিত। তবে তাকে মারধর করা হয়নি, আমরা শুধু তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি এবং সে নিজেই ছাত্রলীগের সদস্য বলে স্বীকার করেছে।”

বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আবু তৈয়ব বলেন, “শাওনের অবস্থা আশঙ্কাজনক নয়, তবে মানসিক চাপে তার শরীরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে বলে আমরা আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছি এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেছি।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ বলেন, “আমরা ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে নিয়েছি। আহত শিক্ষার্থীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে এবং বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।”

এই ঘটনার মাধ্যমে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ও সহিংসতা আবারও সামনে চলে এসেছে। ক্যাম্পাসে ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে বিরোধ, প্রতিশোধ এবং আধিপত্য বিস্তারের এই প্রবণতা শিক্ষার পরিবেশকে দিন দিন নষ্ট করছে বলে অভিমত শিক্ষার্থীদের একাংশের।

বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ বিরাজ করছে। নিরাপত্তা এবং প্রশাসনের সক্রিয়তার অভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলছে সবাই।

উপসংহার: এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সংশ্লিষ্ট ছাত্র সংগঠনগুলোর ভূমিকা পুনর্মূল্যায়নের দাবি উঠেছে। নৈতিকতা, নিরাপত্তা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতির প্রভাব—এই তিনটি বিষয় নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে।

Không có bình luận nào được tìm thấy


News Card Generator