ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটিতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের অন্তর্ভুক্তির অভিযোগে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। পদবঞ্চিতরা তদন্ত কমিটিতেও বিতর্কিত ব্যক্তির থাকার অভিযোগ তুলেছেন।
কা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটিকে ঘিরে তীব্র অসন্তোষ এবং বিতর্ক শুরু হয়েছে সংগঠনের ভেতরে। শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হল শাখায় এক বছরের জন্য নতুন কমিটির অনুমোদন দেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস ও সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন। ঘোষিত তালিকায় মোট ৫৯৩ জন শিক্ষার্থীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
তবে ঘোষণার পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ক্যাম্পাসে সমালোচনার ঝড় ওঠে। অভিযোগ উঠেছে, অন্তত ৫০ জন সদস্য অতীতে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কমিটিতে ছিলেন। পদবঞ্চিতদের দাবি, প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। তারা অভিযোগ করেন, অনেক ত্যাগী নেতা-কর্মীকে বাদ দিয়ে ব্যক্তিগত পছন্দ, স্বজনপ্রীতি ও আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হয়েছে।
শেখ মুজিব হলের সাবেক কর্মী আবু তালিব ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “ছাত্রলীগের হাতে নির্যাতিত হয়ে আমাকে হল ছাড়তে হয়েছিল। বহু বছর ঝুঁকি নিয়ে আন্দোলন করেও পদ পাইনি। অথচ ছাত্রলীগপন্থি অনেক জুনিয়রকে এই কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।”
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ শামীম মিয়াও একই ধরনের অভিযোগ তুলে বলেন, “যাদের বিরুদ্ধে আমরা বছরের পর বছর আন্দোলন করেছি, তারাও আজ এই কমিটির সদস্য। এমনকি যারা প্রকাশ্যে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়েছে, তারাও এখানে স্থান পেয়েছে।
জিয়াউর রহমান হল শাখার এক কর্মী মন্তব্য করেন, “রাজপথে যারা দীর্ঘদিন ধরে সংগ্রাম করেছে, তাদের বদলে নেতাদের ব্যক্তিগত পছন্দের লোকজনকেই বেশি পদ দেওয়া হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে পদবঞ্চিত ও ক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একের পর এক পোস্ট দিয়ে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। অনেকে প্রমাণস্বরূপ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পুরনো ছবি ও তথ্য প্রকাশ করছেন, যেখানে তাদের ছাত্রলীগের বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণের চিত্র ফুটে উঠেছে।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল একটি দুই সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন শাওন ও সাংগঠনিক সম্পাদক নূর আলম ভূঁইয়া ইমনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নবগঠিত কমিটির কোনো সদস্য তথ্য গোপন করলে বা সাংগঠনিক শৃঙ্খলাভঙ্গ করলে তা যাচাই করে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।
তবে তদন্ত কমিটিও বিতর্ক থেকে রেহাই পায়নি। কারণ, তদন্ত কমিটির সদস্য নাছির উদ্দিন শাওনের বিরুদ্ধেও ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার হওয়া কিছু ছবিতে দেখা গেছে, তিনি অতীতে ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। এতে বঞ্চিত নেতাকর্মীরা আরও ক্ষুব্ধ হয়ে প্রশ্ন তুলেছেন—“যিনি নিজেই বিতর্কিত, তিনি কীভাবে অন্যের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ তদন্ত করবেন?”
এই পুরো ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের রাজনীতিতে নতুন করে বিভাজন ও অসন্তোষ গভীর হয়েছে। অনেকে মনে করছেন, এই বিতর্ক শুধু সংগঠনের ভেতরের ঐক্য নষ্ট করবে না, বরং ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের অবস্থানও দুর্বল করে দেবে। ভবিষ্যতে এ ধরনের বিতর্ক এড়াতে স্বচ্ছ যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা জরুরি বলে মত দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা।