নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় চাঁদাবাজির অভিযোগে বিএনপির দুই নেতাকে ৩০ দিনের জন্য ডিটেনশনে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। গ্রেপ্তার হওয়া এই দুই নেতার বিরুদ্ধে তেলের ডিপো এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছিল। গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে প্রমাণ সংগ্রহের পর পুলিশ তাদের আটক করে এবং পরবর্তীতে আদালতের অনুমতিক্রমে ডিটেনশনে পাঠানো হয়।
জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) তারেক আল মেহেদী বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের নারায়ণগঞ্জ মহানগর শাখার আহ্বায়ক ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সহ-সভাপতি এস এম আসলাম (৫৫) এবং তরুণ দলের নারায়ণগঞ্জ জেলা সভাপতি ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক টি এইচ তোফা। উভয়ের বাড়ি সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায়।
পুলিশ সূত্র জানায়, সিদ্ধিরগঞ্জের বিভিন্ন তেলের ডিপোতে চাঁদা আদায়ের অভিযোগে দীর্ঘদিন ধরে এই দুই নেতাকে নজরদারিতে রাখা হয়। সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহের পর বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে তাদের নিজ নিজ বাসা থেকে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে। পরে বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশেষ ক্ষমতা আইন, ১৯৭৪-এর ৩(২) ধারায় তাদের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞার আদালতে সোপর্দ করা হয়। আদালত তাদের ৩০ দিনের আটকাদেশ প্রদান করলে উভয়কে কারাগারে পাঠানো হয়।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সভাপতি মাজেদুল ইসলাম জানান, “বিএনপি কখনোই চাঁদাবাজিকে প্রশ্রয় দেয় না। দলীয়ভাবে আমরা সবসময় অবৈধ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি। যদি কারো বিরুদ্ধে নির্ভরযোগ্য প্রমাণ থাকে, তাহলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা হোক। আমাদের পক্ষ থেকে সহযোগিতা থাকবে। তবে আমরা চাই, যারা প্রকৃতপক্ষে এ ধরনের অপরাধে জড়িত — তারা রাজনৈতিক পরিচয় যাই হোক না কেন — সবাই যেন আইনের আওতায় আসে।”
তবে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এই ঘটনা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কি না, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অবশ্য বলছে, এ বিষয়ে কোনো রাজনৈতিক বিবেচনা নেই, কেবলমাত্র অপরাধের তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাজনীতির ছত্রছায়ায় যারা বিভিন্ন অপরাধে লিপ্ত, তাদের বিরুদ্ধে এমন আইনি ব্যবস্থা দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে স্বচ্ছ করার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। তবে একইসঙ্গে নিশ্চিত করতে হবে, যেন রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বা পক্ষপাতমূলক আচরণ কোনোভাবেই তদন্ত বা আইনি প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত না করে।