গুলশানের সাবেক এমপি শাম্মির বাসায় অভিযানের আগে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের সঙ্গে কথা হয়েছিল বলে দাবি করেছেন চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তার জানে আলম অপু। তিনি অভিযানের আগে ও পরে ঘটে যাওয়া নানা অজানা ঘটনা প্রকাশের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন।
গুলশানের সাবেক এমপি শাম্মির বাসায় চাঞ্চল্যকর অভিযানের আগে এক রহস্যজনক যোগাযোগের কথা জানিয়েছেন চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তার জানে আলম অপু। ফাঁস হওয়া একটি ভিডিওতে অপু দাবি করেন, অভিযানের কয়েক ঘণ্টা আগে তিনি সরাসরি উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তার মতে, এই ঘটনা এবং পুরো অভিযানের পেছনের অনেক তথ্য জনসমক্ষে আনা হয়নি ইচ্ছাকৃতভাবে।
অপু বলেন, “গুলশানে চাঁদাবাজির ঘটনায় টাকার ব্যাগ নিতে যাকে দেখা গেছে, সেটি আমি। আপনারা একটি ফুটেজের মাধ্যমে দেখেছেন যে, কিছু সমন্বয়ক এই ঘটনায় জড়িত। অথচ গত বছর যাদের ‘মহানায়ক’ বলা হচ্ছিল, তারাই আজ চাঁদাবাজের আসামি। আমার প্রশ্ন—মিডিয়ায় কি এসেছে, যে আমরা ভোর ৫টার দিকে সংশ্লিষ্ট ডিসি-এসিকে অবহিত করে একদম অফিসিয়াল প্রক্রিয়ায় পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে শাম্মির বাসায় গিয়েছিলাম? জানেন কি, অভিযানের আগে গুলশানের এক জায়গায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল?”
তিনি অভিযোগ করেন, “আগের রাতের ঘটনাটি কেন মিডিয়ায় প্রকাশ করা হয়নি? ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা কেন হলো? সেই ভোরের অভিযানের তথ্য সংবাদে নেই কেন? অভিযানের সময় আমরা স্পষ্ট বুঝতে পেরেছিলাম—শাম্মি সেখানে ছিলেন, কিন্তু তথ্য পেয়ে পালিয়ে গেছেন। যে আড়াই মিনিটের ভিডিও ভাইরাল করে আমাদের রাতারাতি ভিলেন বানানো হলো, আমি চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি—সাহস থাকলে আগের রাতের সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ করুন। দেখুন কার সঙ্গে কার কথা হয়েছিল, কে ফোন করেছিলেন, শাম্মি কীভাবে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন।”
অপু আরও বলেন, “আমরা অভিযানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে গিয়েছিলাম। সেসময় আমাদের মধ্যে কী আলোচনা হয়েছিল—তাও প্রকাশ করা হোক।”
এরপরের ঘটনার বর্ণনায় অপু জানান, “পরদিন রিয়াদ আমাকে ফোন দিয়ে বাসায় ডাকেন। তিনি বলেন, ‘ভাই, বাসায় আসেন, জরুরি কথা আছে।’ এরপর জানান যে শাম্মির স্বামী বাসা থেকে বের হননি, তারা নজরদারি করছেন। আমি সেখানে গেলে রিয়াদ আমাকে ভেতরে নিয়ে যান। পরে শাম্মির স্বামী এসে ৫ লাখ টাকা অফার করেন, বলেন, ‘আমরা শান্তিপ্রিয় মানুষ, সারা জীবন চাকরি করেছি, কোনো রাজনীতিতে নাই। এই বয়সে এসে আমাদের হয়রানি করবেন না। শান্তিতে থাকতে দিন।’”
অপু জানান, শাম্মির স্বামী জানতে চান—তাদের অবস্থান সম্পর্কে তথ্য কে দিয়েছে এবং তারা কীভাবে বাসার খবর পেলেন। তিনি ওই দুই প্রশ্নের বিনিময়ে ৫ লাখ টাকা দিতে রাজি হন এবং টাকা আনতে চলে যান। কিন্তু তখন রিয়াদের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বিস্মিত হন। রিয়াদ পাল্টা জবাবে বলেন, “কিসের ৫ লাখ? এক কোটির নিচে কথাই হবে না।”
এই দাবি এবং ঘটনার বিবরণ নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে অভিযানের প্রকৃত উদ্দেশ্য, অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ভূমিকা নিয়ে। অপু’র কথায় বোঝা যায়, পুরো ঘটনাই একটি জটিল চক্রের অংশ, যেখানে অভিযানের আগের রাতের রহস্যই হতে পারে মূল চাবিকাঠি।