চাঁদাবাজির অভিযোগে কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা ধরা পড়লেও বহাল রয়েছে সেই কমিটিই, বরং বাতিল করা হয়েছে সারা দেশের সকল কমিটি! প্রশ্ন তুলেছেন আব্দুন নূর তুষার।
দেশজুড়ে চাঁদাবাজির অভিযোগে যখন উত্তাল রাজনৈতিক পরিমণ্ডল, তখন বেসরকারি এক টেলিভিশনের টক শোতে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও চিকিৎসক আব্দুন নূর তুষার। তিনি সরাসরি অভিযোগ করে বলেন, দলীয়ভাবে চাঁদাবাজদের প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে, এমনকি রাষ্ট্রীয়ভাবেও কিছু দল বিশেষ নিরাপত্তা পাচ্ছে।
তুষার বলেন, “চাঁদা কি শুধু মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তোলা হচ্ছে? না। এখন তো রাষ্ট্রের ওপরেই চাঁদাবাজি চলছে। যারা পদযাত্রা করছে, সভা-সমাবেশ করছে, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার ঘেরাটোপে ঢুকেছে—তাদের জন্য পুলিশের থানা বদল করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। এমনকি তাদের প্রোগ্রামে যেন বিদ্যুৎ না যায়, সে জন্য চিঠি দিয়ে বলে দেওয়া হচ্ছে। এটা কি অন্য কোনো দল পায়? আসলে এই দল রাষ্ট্রের ভেতরেও আছে, আবার বাইরেও। এটাই হচ্ছে বরফখণ্ডের সেই অংশ—যার ৯০% ডুবে থাকে, আর ১০% চোখে দেখা যায়।”
তিনি অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন ধরেই দেশে চাঁদাবাজির সংস্কৃতি চালু রয়েছে। “এই চাঁদাবাজি কি নতুন? মানুষের ঘরে ঢুকে লুটপাট, মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়া হয়েছে, অথচ সরকার এটাকে বলেছে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ! বরং এখন ‘সেলিব্রেশন’ ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত পৌঁছেছে।”
তুষার আরও বলেন, চাঁদাবাজদের বড় অংশ রাষ্ট্রীয়ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা পায়, এবং তারা রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য এসব ব্যবহার করছে। “কেউ কি দেখেনি গাড়ির জানালা দিয়ে একজন টাকা দিয়ে বলছেন, এর আগেও তিনি টাকা দিয়েছেন? সেই ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। কিন্তু ওই টাকাটা নেওয়া ব্যক্তি এখন কোথায়? তার বিরুদ্ধে তদন্ত কি হয়েছে? তাকে কি রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে? কেউ কি কোনো দাবি তুলেছে?”
সবচেয়ে বিস্ময়ের বিষয়, চাঁদাবাজির অভিযোগে কিছু নেতাকর্মী ধরা পড়ার পর কেন্দ্রীয় কমিটির বাইরে দেশের সব শাখা কমিটি বাতিল করা হয়েছে, অথচ মূল কেন্দ্রীয় কমিটিই বহাল রয়েছে। এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়ে তুষার বলেন, “কেন্দ্রীয় কমিটির কেউ ধরা পড়ল চাঁদাবাজিতে, অথচ ওই কমিটিই বহাল থাকল! বরং সারা দেশের কমিটিগুলো বাতিল করা হলো। এর মানে কী দাঁড়ায়? যে চাঁদাবাজি করেছে সে রয়ে গেল, আর যারা হয়তো কিছুই জানত না, তাদের কমিটি তুলে দেওয়া হলো!”
তিনি প্রশ্ন তোলেন, “এটা কি বিচার? এটা তো উল্টো অন্যায়কে পুরস্কৃত করার মতো! ছোটদের বাদ দিয়ে এখন শুধু বড়রা খাবে—এই বার্তাই কি দেওয়া হচ্ছে?”
অবশেষে তুষার বলেন, এই ঘটনাগুলো শুধু চাঁদাবাজি নয়, বরং রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা, নির্লজ্জ প্রশ্রয় ও বৈষম্যের প্রতিচ্ছবি। “চাঁদাবাজি এখন আর গোপন কিছু নয়, এটা রাষ্ট্রীয় কাঠামোতেই ঢুকে পড়েছে। তাই শুধু কিছু লোক গ্রেপ্তার করে দায় সারা যাবে না। দরকার রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক সংস্কার।”