মাত্র একটু দেরি হবে—এই কথা বলাতেই প্রাণ গেল ২২ বছরের হোটেল কর্মচারী রুমনের। সিলেটের কাজির বাজারে ঘটে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ড।
সিলেটের কাজির বাজারে সংঘটিত একটি মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড গোটা এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। মাত্র একটি নিরীহ বাক্য—“চা দিতে একটু দেরি হবে”—এই কথার জেরেই প্রাণ হারিয়েছেন ২২ বছরের তরুণ হোটেল কর্মচারী রুমন আহমদ। ঘটনাটি রোববার (১৩ জুলাই) দুপুরে ঘটে, যা তাৎক্ষণিকভাবে সবার মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়।
স্থানীয় সূত্র ও পুলিশ জানায়, রোববার সকাল সাড়ে দশটার দিকে কাজির বাজার এলাকার একটি হোটেলে চা খেতে আসেন এক যুবক। চা বানাতে কিছুটা সময় লাগবে বলে জানালে হোটেল কর্মচারী রুমনের সঙ্গে ওই যুবকের কথা কাটাকাটি শুরু হয়। মুহূর্তেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। হোটেল মালিক ও উপস্থিত কয়েকজন লোক তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি মীমাংসা করে দেয়।
কিন্তু সেখানেই শেষ হয়নি ঘটনা।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায়, তর্কের প্রায় ৩০ মিনিট পর সেই যুবক কয়েকজন সহযোগীকে নিয়ে আবার হোটেলে ফিরে আসে। সবাই ছিল আগ্নেয়। কথা না বাড়িয়ে একেবারে হোটেল কর্মচারী রুমনের ওপর ছুরিকাঘাত শুরু করে তারা। হামলা শেষে রক্তাক্ত রুমনকে ফেলে পালিয়ে যায় হামলাকারীরা।
অন্য কর্মচারীরা ও স্থানীয়রা দ্রুত রুমনকে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার পরপরই কোতোয়ালি মডেল থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। থানা ওসি মো. জিয়াউল হক জানান, “চা দিতে একটু দেরি হবে বলায় যে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে তা সত্যিই দুঃখজনক এবং অপ্রত্যাশিত। হামলাকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
রুমনের মৃত্যুতে কাজির বাজার এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। হোটেল মালিক ও অন্যান্য কর্মচারীরা হতবাক হয়ে পড়েন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রুমন ছিল শান্ত-ভদ্র স্বভাবের, কারও সঙ্গে বিরোধে জড়ানোর মতো মানুষ নয়।
একটি সাধারণ বাক্য, এক মুহূর্তের ক্ষোভ—তাতেই কেড়ে নেয়া হলো এক তরুণের জীবন। এই ঘটনাটি কেবল আইনশৃঙ্খলার বিষয় নয়, বরং আমাদের সমাজে সহিষ্ণুতার ঘাটতির প্রতিচ্ছবিও।
রুমনের মতো একজন কর্মঠ যুবক, যিনি হয়তো পরিবারের ভরণপোষণের জন্য পরিশ্রম করছিলেন, তাকে এভাবে হারানো আমাদের বিবেককে নাড়িয়ে দেয়।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের একাধিক টিম ইতোমধ্যে অভিযানে নেমেছে। সিসিটিভি ফুটেজ, প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানবন্দি ও প্রযুক্তির সহায়তায় দ্রুত হামলাকারীদের গ্রেফতার করা হবে বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
রুমন আহমদের মৃত্যু একটি নিছক অপরাধ নয়, এটি আমাদের সমাজে দ্রুত ক্ষোভ বিস্ফোরণের এক ভয়ংকর উদাহরণ। এই হত্যাকাণ্ড কেবল বিচারই দাবি করে না, দাবি করে সমাজের মানসিক পুনর্গঠনের।