জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেছেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের দায়ভার বিএনপির ওপরই বর্তায়। তিনি মনে করেন, মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময় থেকে আজ পর্যন্ত যে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিভাজনের সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, তার ধারাবাহিকতা আজকের এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর সোনারগাঁওয়ে আয়োজিত ‘মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে রাষ্ট্র গঠনের ব্যর্থতার অনিবার্য পরিণতি: নভেম্বর ১৯৭৫’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
আখতার হোসেন বলেন, “আমরা পঁচাত্তরের ঘটনাপ্রবাহ দেখি, মুক্তিযুদ্ধের পরের সময়ের ঘটনাপ্রবাহ দেখি—এই ধারাবাহিক ব্যর্থতার দায় যেমন আওয়ামী লীগের, তেমনি আজকের রাজনৈতিক সংকটের দায়ভার বিএনপির কাঁধেই বর্তায়। তারা বারবার সুযোগ পেয়েও গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করার পরিবর্তে নিজেদের ক্ষমতার রাজনীতি করেছে।”
তিনি আরও বলেন, দেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তর নিশ্চিত করতে ঐকমত্য কমিশনে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। কিন্তু সেখানে বিএনপি যে নোট অব ডিসেন্ট (ভিন্নমত) দিয়েছে, তা সংস্কারের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। “বিএনপির এই ভিন্নমত বহাল থাকলে এনসিপির দেওয়া সংস্কার প্রস্তাবগুলো কখনোই কার্যকর হবে না,” মন্তব্য করেন তিনি।
আখতার হোসেন বলেন, “দেশকে নতুনভাবে গড়তে হলে আমাদের দলাদলি বাদ দিতে হবে। সংকীর্ণ রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে সবাইকে জাতীয় স্বার্থে এক হতে হবে। বাংলাদেশের জন্য প্রস্তাবিত সংস্কারগুলো বাস্তবায়নে সকলের অংশগ্রহণই দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।”
এ সময় তিনি এনসিপির নিবন্ধনের বিষয়েও আশাবাদ ব্যক্ত করেন। “অনেকে কটাক্ষ করেছে—এনসিপি নিবন্ধন পাবে কি না, জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে কি না। কিন্তু দিন শেষে প্রমাণ হয়েছে, জনগণ এনসিপির পাশে আছে। আগামী নির্বাচনে জনগণ আমাদের প্রতি তাদের সমর্থন ব্যক্ত করবে,” বলেন আখতার হোসেন।
আলোচনায় আরও বক্তব্য রাখেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি বলেন, বিএনপি একদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়, যেখানে গণতন্ত্র কেবল জিয়াউর রহমানের পরিবারের জন্য। “আমরা এমন গণতন্ত্র চাই না যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নেই, গণতন্ত্র শুধু একটি পরিবারের হাতে বন্দি থাকে,” বলেন তিনি।
নাসীরুদ্দীন নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “জোটবদ্ধ দলগুলোকে নিজ নিজ প্রতীকে নির্বাচনের সুযোগ দেওয়ায় প্রতীক বিক্রির ব্যবসা বন্ধ হয়েছে।” পাশাপাশি তিনি জামায়াতে ইসলামীকে ধর্মের নামে রাজনীতি না করার আহ্বান জানান।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, মুক্তিযুদ্ধত্তোর রাষ্ট্রগঠনের ব্যর্থতার পেছনে শেখ মুজিবের বিভক্তির রাজনীতি অন্যতম কারণ। “আওয়ামী লীগ শুধু দেশের ইতিহাস নয়, নিজেদের দলের ইতিহাসও বিকৃতভাবে উপস্থাপন করেছে,” অভিযোগ করেন তিনি।
সভায় আরও বক্তব্য দেন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ, যুগ্ম সদস্যসচিব মুশফিক উস সালেহীন, জয়নাল আবেদীন শিশিরসহ অন্যান্য নেতারা। তারা সবাই বিএনপি ও আওয়ামী লীগের দ্বৈত ব্যর্থতার সমালোচনা করে এনসিপির নেতৃত্বে একটি নতুন গণতান্ত্রিক ধারার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
এই সভার মধ্য দিয়ে এনসিপি নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান আরও সুস্পষ্ট করে তুলে ধরে। তারা বিশ্বাস করে, আগামী নির্বাচনে জনগণ অতীতের ব্যর্থ রাজনীতিকে প্রত্যাখ্যান করে একটি নতুন রাজনৈতিক শক্তিকে বেছে নেবে, যারা দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে দেশের স্বার্থে কাজ করবে।



















