ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার উড়শিউড়া গ্রামে রবিবার (১৫ জুন) ঘটে যাওয়া একটি মর্মান্তিক ঘটনায় পুরো এলাকা স্তম্ভিত। একটি ছোট্ট উঠোনে রান্নার ধোঁয়ার কারণে শুরু হওয়া পারিবারিক দ্বন্দ্বে প্রাণ হারান মনির হোসেন (৪৫)।
ঘটনার প্রেক্ষাপট
সেদিন দুপুরবেলা, মনির হোসেনের বড় ভাই বাবুল মিয়ার স্ত্রী জুবায়দা বেগম তাদের বসতঘরের দরজার সামনে মাটির চুলায় রান্না করছিলেন। চুলার ধোঁয়া ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়ায় আপত্তি জানান মনির। এই সামান্য আপত্তি থেকে শুরু হয় উচ্চস্বরে তর্ক, যা দ্রুতই সহিংসতায় রূপ নেয়।
মনিরের বিরুদ্ধে নির্মম নির্যাতনে জড়িয়ে পড়েন তার ভাই বাবুল মিয়া, ভাগনে শাওনসহ আরও কয়েকজন। অস্ত্রহাতে মনিরকে ভয় দেখানোর পর, তারা লাঠি ও ইট দিয়ে তাকে আঘাত করে। এই হামলার ফলে মনির গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে সেন্ট্রাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড হসপিটালে স্থানান্তর করা হলেও সন্ধ্যা ৭টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
নিহতের স্ত্রীর বক্তব্য
মনিরের স্ত্রী জুলেখা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমার স্বামী শুধু ধোঁয়া নিয়ে আপত্তি করেছিল। তাতেই ওরা দলবেঁধে মারধর করে মেরে ফেলল। বড় ভাই নিজেই বলেছে ছেলেকে—‘আরও মারো’। আমি বিচার চাই, আমি শাস্তি চাই।”
সমাজের প্রতিক্রিয়া
প্রতিবেশীদের মধ্যে একজন প্রবীণ ব্যক্তি বলেন, “একটুখানি ধোঁয়া থেকে যে এত রক্ত ঝরতে পারে, তা কল্পনাও করিনি। এখন ঘরের মানুষই আর নিরাপদ নয়। পারিবারিক সম্পর্ক যেন বিষে ভরে গেছে। এই ঘটনা আমাদের সমাজের অবক্ষয়ের প্রমাণ।”
পুলিশি তদন্ত
ঘটনার পর রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) রকীব উর রাজা। সদর থানার এসআই জিয়া উদ্দিন জানান, “নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। মামলা প্রক্রিয়াধীন এবং অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।”
বিশ্লেষণ
এই মর্মান্তিক ঘটনাটি আমাদের সামাজিক অবক্ষয়ের নগ্ন প্রতিচ্ছবি। পারিবারিক সম্পর্কের ভিতরেই লুকিয়ে থাকা বিদ্বেষ কিভাবে প্রাণঘাতী হতে পারে, তা এই ঘটনার মাধ্যমে আমরা প্রত্যক্ষ করলাম। রান্নার ধোঁয়া থেকে শুরু হওয়া এই বিবাদ আমাদের সামাজিক সম্পর্কের ভঙ্গুরতাকে প্রকাশ করে।
উপসংহার
ধোঁয়া উঠেছিল রান্নার চুলা থেকে। অথচ সেই ধোঁয়ায় হারিয়ে গেল পারিবারিক বন্ধন, ভেসে গেল বিশ্বাস, রক্তে রঞ্জিত হলো এক ভাইয়ের জীবন। এই ঘটনা কেবল একটি হত্যাকাণ্ড নয়—এটি আমাদের সামাজিক অবক্ষয়ের নগ্ন প্রতিচ্ছবি।