মিয়ানমারের ব্রিটিশ আমলে নির্মিত ঐতিহাসিক গোকতেইক রেলসেতু বোমা বিস্ফোরণে ধসে পড়েছে। ঘটনাটির জন্য জান্তা সরকার বিদ্রোহীদের দায়ী করলেও, বিদ্রোহীরা পাল্টা অভিযোগ তুলেছে সেনাবাহিনীর ওপর।
মিয়ানমারে দীর্ঘ ইতিহাসের সাক্ষী এক অবকাঠামো আজ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হলো। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে নির্মিত প্রায় ১২৪ বছরের পুরনো ‘গোকতেইক রেলসেতু’ বোমা হামলায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে দেশটির শাসক জান্তা সরকার। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে একে অপরের ওপর দায় চাপাচ্ছে জান্তা ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো।
রবিবার (২৪ আগস্ট) জান্তা সরকারের মুখপাত্র ঝাও মিন তুন এক ভিডিও বার্তায় দাবি করেন, জান্তাবিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠী তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ) এবং পিপলস ডিফেন্স ফোর্স (পিডিএফ) যৌথভাবে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এই ঐতিহাসিক সেতুটি উড়িয়ে দিয়েছে। তার ভাষায়, “বিদ্রোহীরা পরিকল্পিতভাবে মিয়ানমারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগপথ ধ্বংস করে দিয়েছে, যা দেশের জন্য বড় ক্ষতি।”
অন্যদিকে, বিদ্রোহী সংগঠন টিএনএলএ অভিযোগটি সরাসরি অস্বীকার করেছে। সংগঠনের মুখপাত্র লওয়ে ইয়াই উ জানান, সেতুটি জান্তার বোমা হামলাতেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি দাবি করেন, “সকালে সেনারা ড্রোন ব্যবহার করে আমাদের ঘাঁটিতে আক্রমণের চেষ্টা চালায়। তারা আমাদের লক্ষ্যবস্তু করলেও বোমাগুলো গিয়ে গোকতেইক রেলসেতুতেও আঘাত হানে।
গোকতেইক রেলসেতুটি মিয়ানমারের মান্দালয় থেকে উত্তর শান অঙ্গরাজ্যকে রেলপথে যুক্ত করেছিল। ১৯০১ সালে ব্রিটিশরা এটি নির্মাণ করে, যা ভূমি থেকে প্রায় ১০২ মিটার (৩৩৪ ফুট) উঁচু। নির্মাণের সময় এটি ছিল বিশ্বের সর্বোচ্চ রেলসেতু এবং বর্তমান সময়েও এটি মিয়ানমারের সবচেয়ে উঁচু সেতু হিসেবে বিবেচিত। তাই এটির ধ্বংস মিয়ানমারের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের জন্য এক বড় ক্ষতি বলে মনে করছেন ইতিহাসবিদরা।
ঘটনার পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেতুর ভাঙা অংশের ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। সেগুলোতে দেখা যায়, বিশাল কাঠামোর একাংশ ধসে পড়েছে এবং রেল চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এর ফলে উত্তর শানের অনেক এলাকায় যাতায়াত মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে গোকতেইকের কাছাকাছি নাওংকিও ও কিয়াউকমি শহরে সেনা ও টিএনএলএর মধ্যে তীব্র লড়াই হয়েছে। গত জুলাইয়ে নাওংকিও শহর পুনর্দখলের দাবি করেছিল জান্তা। তবে বাস্তবে বিদ্রোহীদের শক্তি ক্রমেই বাড়ছে।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালে মিয়ানমারের নির্বাচিত বেসামরিক সরকারকে ভোট জালিয়াতির অজুহাতে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। তখন থেকেই দেশটিতে একদিকে জান্তা সরকার, আরেকদিকে বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে চলমান সংঘর্ষে হাজারো মানুষ প্রাণ হারিয়েছে এবং লক্ষাধিক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ঐতিহাসিক গোকতেইক রেলসেতুর ধ্বংস শুধু প্রতীকী নয়, এটি মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংকটের গভীরতাকেও তুলে ধরছে। কারা প্রকৃতপক্ষে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে, তা স্পষ্ট না হলেও উভয় পক্ষের পাল্টাপাল্টি অভিযোগে পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে।