বোয়ালমারীতে দেলোয়ার হোসেন হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন, অভিযুক্তরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে..

ফরিদপুর ডেস্ক avatar   
ফরিদপুর ডেস্ক
মুহাম্মদ ইমরান, ফরিদপুর করেসপনডেন্ট

ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে দেলোয়ার হোসেন (দুলু মোল্যা) হত্যার প্রতিবাদে এলাকাবাসীদের বিক্ষোভ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শনিবার (১২ এপ্রিল) সকাল ১০টায় বোয়ালমারী মেইন রোডের ওয়াপদা মোড়ে এই মানববন্ধনের আয়োজন করে এলাকাবাসী। নিহত দুলু মোল্যার পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়রা হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

 

ঘটনার সূত্রপাত হয় নিহতের বড় ভাই মো. আমির হোসেনের জমিতে মাটি ফেলার সময়। ঘটনার দিন সকাল ১১টার দিকে মাটি পরিবহনকারী গাড়ির কিছু অংশ বিবাদী পক্ষের জমির উপর দিয়ে গেলে এবং কিছু মাটি তাদের জমিতে পড়লে বিবাদ শুরু হয়। এ ঘটনা কেন্দ্র করে কাশেম মোল্যা, সিদ্দিক মোল্যা, লুৎফর মোল্যা এবং তাদের ঘনিষ্ঠজনরা উত্তেজনা সৃষ্টি করে ও গালিগালাজ শুরু করে।

 

প্রথমে বিষয়টি হাতাহাতির পর্যায়ে থাকলেও দুলু মোল্যা ঘটনাস্থল ত্যাগের সময়, অভিযুক্ত মো. মফিজুল কাদের খান মিল্টন তাকে কলার ধরে মারধর শুরু করে। পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে, যখন পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ওঁৎ পেতে থাকা সিদ্দিক মোল্যা ধারালো অস্ত্র দিয়ে নিহতের বাম পাঁজরে আঘাত করেন। নিশ্চিত মৃত্যুর জন্য তার বাবা লুৎফর মোল্যা ডান পাঁজরেও কোপ দেন।

 

গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে ২৭ মার্চ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, আহতের নাড়ি-ভুঁড়ি কেটে যাওয়ায় অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হয় এবং অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে জরুরি অপারেশনের মাধ্যমে তার পাকস্থলী অপসারণ করতে হয়। ফুসফুস বিকল হয়ে গেলে তাকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়।

 

দীর্ঘ ৭-৮ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করার পর, ২০২৫ সালের ৬ এপ্রিল দুপুর ৩টা ৫০ মিনিটে দুলু মোল্যা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী এবং দুটি শিশু সন্তান (বয়স ৮ ও ১০ বছর) রেখে গেছেন।

 

নিহতের পরিবার জানান, তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন তাকে বাঁচানোর জন্য। নিহতের ভাই আব্দুর রাজ্জাক বলেন, "আমরা ফরিদপুর মেডিকেল থেকে ঢাকা মেডিকেল—সব জায়গায় চেষ্টা করেছি, কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।"

 

এ ঘটনায় নিহতের অপর ভাই আ. মান্নার মোল্যা বাদী হয়ে ২৭ মার্চ বোয়ালমারী থানায় ৬ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন। তবে এখন পর্যন্ত মাত্র ২ জনকে গ্রেফতার করা হলেও, তারা জামিনে মুক্তি পেয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, পুলিশ যথাযথ তৎপরতা দেখাচ্ছে না।

 

মানববন্ধনের সময় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহামুদুল হাসান ঘটনাস্থলে এসে নিহতের পরিবারকে বিচার নিশ্চিতে আশ্বস্ত করেন এবং মানববন্ধন প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। 

 

ওসির আশ্বাসে মানববন্ধন প্রত্যাহার করা হয়। তবে নিহতের পরিবার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, দ্রুত অপরাধীদের গ্রেফতার করা না হলে তারা আবারও আন্দোলনে নামবেন।

পরিশেষে, নিহতের পরিবার এবং মানববন্ধনকারীরা সৃষ্ট জনদুর্ভোগের জন্য এলাকাবাসীর কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন এবং ক্ষমা চান।

कोई टिप्पणी नहीं मिली